শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

৪০০ বছর পরও শেকসপিয়র

তানিয়া তুষ্টি

৪০০ বছর পরও শেকসপিয়র

প্রথম জীবন

উইলিয়াম শেকসপিয়রের বাবা জন শেকসপিয়র ছিলেন একজন সফল গ্লোভার ও অল্ড্যারম্যান। তার আদি নিবাস ছিল স্নিটারফিল্ডে। মা মেরি আরডেন ছিলেন এক ধনী ভূশালী কৃষক পরিবারের সন্তান। শেকসপিয়র জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্ট্যাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে। আট ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় এবং জীবিত সন্তানদের মধ্যে বড়। লিখিত কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ধারণা করা হয় শেকসপিয়র সম্ভবত স্ট্যাটফোর্ডের কিংস নিউ স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। প্রচলিত আছে শেকসপিয়র হরিণ রান্না করার অপরাধে বিচারের হাত থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রচলিত আর একটি গল্প হলো, শেকসপিয়র লন্ডনের থিয়েটার পৃষ্ঠপোষকদের ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নাট্যশালায় কাজ করতে শুরু করেন। অপর একজন লিখেছেন শেকসপিয়র গ্রামে স্কুলশিক্ষকের চাকরি করতেন। বিংশ শতাব্দীর কয়েকজন গবেষকের মতে ল্যাঙ্কাশায়ারের আলেকজান্ডার নামে এক ক্যাথলিক ভূস্বামী তাকে স্কুলশিক্ষক রূপে নিয়োগ করেছিলেন। এই ব্যক্তি তার উইলে উইলিয়াম শেকশ্যাফট নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন। তবে এই সব গল্পের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সব গল্পই তার মৃত্যুর পর প্রচলিত হয়।

 

 

সাহিত্যের বরপুত্র

ইংরেজি সাহিত্যের বরপুত্র উইলিয়াম শেকসপিয়র। জন্মেছেন ২৩ এপ্রিল ১৫৬৪ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ২৩ এপ্রিল ১৬১৬ সালে। তিনি ছিলেন ইংরেজ কবি ও নাট্যকার। তাকে ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকার মনে করা হয়। ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং বার্ড অব অ্যাভন বা অ্যাভনের চারণকবি নামেও তিনি অভিহিত। তার রচিত ৩৮টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, দুটি দীর্ঘ আখ্যানকবিতা এবং অপ্রমাণিক কয়েকটি কবিতা পাওয়া গেছে। অন্য লেখকদের সঙ্গে তিনি যৌথভাবেও কিছু লিখেছিলেন। তার নাটকগুলো প্রতিটি প্রধান জীবিত ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ ছাড়াও তার নাটক সব চেয়ে বেশিবার মঞ্চস্থ হয়েছে। ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তার রচনাগুলো ছিল মূলত মিলনান্তক ও ঐতিহাসিক নাটক। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে তার দক্ষতায় এই দুটি ধারা শিল্পসৌকর্য ও আভিজাত্যের প্রকাশ পেয়েছিল। ১৬০৮ সালের দিকে কয়েকটি বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেন। এই ধারায় রচিত হয় হ্যামলেট, কিং লিয়ার ও ম্যাকবেথ। জীবনের শেষ পর্বে তিনি ট্র্যাজিকমেডি রচনা করেছিলেন। এই রচনাগুলো রোম্যান্স নামেও পরিচিত। এই সময় অন্য নাট্যকারদের সঙ্গে যৌথভাবেও কাজ করেন তিনি।

 

 

সংসার জীবন

মাত্র ১৮ বছর বয়সে শেকসপিয়র ২৬ বছর বয়সী অ্যানি হ্যাথাওয়েকে বিয়ে করেন। ১৫৮২ সালের ২৭ নভেম্বর ওরসেস্টরের অ্যাংলিক্যান ডায়োসিসের কনসিস্টরি কোর্ট একটি বিবাহ লাইসেন্স জারি করেছিল। তার দুদিন বাদে হ্যাথাওয়ের প্রতিবেশীরা একটি বন্ড পোস্ট করে জানান যে, বিবাহের কোনো আইনগত দাবি আদায় বাকি নেই। খুব তাড়াহুড়া করে বিয়ে করতে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ‘ম্যারেজ ব্যানস’ তিন বার পাঠের বদলে মাত্র একবার পাঠ করেছিলেন। বিয়ের ছয় মাস পরে তাদের ঘরে অ্যানি সুজানা নামে একটি মেয়ের জন্ম হয়। এর দুই বছর বাদে ১৫৮৫ সালে শেকসপিয়র দম্পতির হ্যামনেট নামে এক পুত্র ও জুডিথ নামে এক কন্যা জন্মায়। এগার বছর বয়সে হ্যামনেটের মৃত্যু হয়। ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত বছরগুলোকে বিশেষজ্ঞেরা তাই শেকসপিয়রের জীবনের হারানো বছর বলে উল্লেখ করে থাকেন। তবে এই সময়ে তিনি অভিনেতা ও নাট্যকার হিসেবে লন্ডনে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। লর্ড চেম্বারলেইনস ম্যান নামে একটি নাট্য কোম্পানির তিনি ছিলেন সহ-স্বত্বাধিকারী। এই কোম্পানিটিই পরবর্তীকালে কিংস মেন নামে পরিচিত হয়। ১৬১৩ সালে তিনি নাট্যজগৎ থেকে সরে আসেন এবং স্ট্র্যাটফোর্ডে ফিরে যান। তিন বছর বাদে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

 

 

তার যত নাটক

১৬২৩ সালে ফার্স্ট ফোলিওতে প্রকাশিত শেকসপিয়রের ৩৬টি নাটককে প্রথমত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। মিলনান্তক নাটক বা কমেডি, ঐতিহাসিক বা হিস্ট্রি ও বিয়োগান্তক বা ট্র্যাজেডি। প্রিন্স অব টায়ার এবং দ্য টু নোবল কিনসমেন ও পেরিক্লিস নামের দুটি নাটক ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই নাটকের অধিকাংশটাই শেকসপিয়রের রচনা। সেসময় শেকসপিয়রের কোনো কবিতাই ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ১৮৯৬ সালে ফ্রেডরিক এস. বোয়াস অলস ওয়েল দ্যাট অ্যান্ডস ওয়েল, মেজার ফর মেজার, ট্রলিয়াস অ্যান্ড ক্রেসিডা ও হ্যামলেট নাটক চারটির জন্য প্রবলেম প্লে নামে একটি শব্দ ব্যবহার করেন। তিনি লেখেন, বিষয়বস্তুগত সমতা ও সমধর্মিতা-সম্পন্ন নাটকগুলোকে নিছক কমেডি বা ট্রাজেডি বলা যায় না। তাই আমাদের আজকের থিয়েটার থেকে যথোপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে হবে এবং এ নাটকগুলোকে শেকসপিয়রের প্রবলেম প্লে শ্রেণির অন্তর্গত করতে হবে। যদিও হ্যামলেট নাটকটি নির্দিষ্টভাবেই ট্র্যাজেডি শ্রেণিভুক্ত হয়ে আছে। তার লেখা লাভস লেবারস উইন ও কার্ডেনিও নামের দুটি নাটক হারিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া তার লেখা ১০টির অধিক নাটক আছে যা অপ্রমাণিক। আদও সেগুলো তার কিনা জানা নেই।

 

 

আজও অমলিন

শেকসপিয়রের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নথিভুক্ত তেমন কোনো তথ্য নেই। তার চেহারা, যৌনপ্রবৃত্তি, ধর্মবিশ্বাস, এমনকি তার নামে প্রচলিত নাটকগুলো যে সবই তার লেখা, নাকি অন্যের তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর মতভেদ। তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত নাটকগুলোর মান ও প্রামাণ্যতা সর্বত্র সমান ছিল না। ১৬২৩ সালে তার দুই প্রাক্তন নাট্যসহকর্মী দুটি নাটক বাদে শেকসপিয়রের সমগ্র নাট্য সাহিত্যের ফার্স্ট ফোলিও প্রকাশ করেন। তখন তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত কবি ও নাট্যকার। কিন্তু মৃত্যুর পর খ্যাতি হ্রাস পেতে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবার খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। রোমান্টিকেরা তার গুণগ্রাহী হয়ে পড়ে। ভিক্টোরিয়ানরা রীতিমতো তাকে পূজা করতে থাকে। আজও তার নাটক অমলিন, সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুচর্চিত। তার মৃত্যুর ৪০০ বছর পরেও সারা বিশ্বের নানা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা আঙ্গিকে এই নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয়ে চলেছে।

 

 

বর্ণাঢ্য জীবন

সময়ের অভিযাত্রায় শেকসপিয়র চিরনতুন। তার নাটকের প্রেম, ভালোবাসা, ঘৃণা, প্রতিশোধের আবেগ চিরন্তন। তার অসংখ্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত চরিত্র আমাদের নিজের এবং পারিপার্শ্বিক মানুষের মাঝে এখনো বিদ্যমান। সৎ, নিষ্কলুষ, উপকারী, বন্ধুবৎসল থেকে অপরাধীতে রূপায়িত করেছেন অসামান্য দক্ষতায়। তার রচিত রোমিও জুলিয়েট সব যুগেই চলমান প্রেমের প্রতীক হয়ে আছে। অপরিণামদর্শী চরিত্রগুলো ভুল করে আর অনুতপ্ত হয় কিন্তু যার ফিরে আসার পথ থাকে না। হ্যামলেটের বাবা হারানোর দুঃখবোধ প্রতিটি সন্তানের প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে স্পর্শ করে যায়। শেকসপিয়র নারীর প্রেম, আত্মত্যাগ, বুদ্ধি এমনকি ভয়ঙ্কর রূপটিও লিপিবদ্ধ করে গেছেন নিখুঁত সাফল্যে। তিনি বেঁচে থাকতেই তার এমন গুণের প্রকাশ ছড়িয়েছিল চারদিকে। অর্থাৎ সাহিত্যাঙ্গনে তার বর্ণাঢ্য পদচারণা নিজেই অনুভব করে গেছেন। এ ধরনের লোক সাধারণত বিষয়ী জীবনে উদাসীন হন। অথচ তিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী ও সংসারী।

 

 

আছে ট্রাস্ট

দ্য শেকসপিয়র বার্থপ্লেস ট্রাস্ট হলো স্বাধীন দানশীল প্রতিষ্ঠান। এটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শেকসপিয়রীয় ঐতিহ্যস্থান স্ট্যাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনের স্বকীয়তা বজায় রাখতে কাজ করে। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তার জীবনের কর্ম, অর্জন, উদ্দেশ্য ও সাহিত্য সৌন্দর্য বিলানো হয়। ট্রাস্টটি গঠন করা হয় ১৮৪৭ সালে। উদ্দেশ্য ছিল এটাকে জাতীয় স্মারক হিসেবে গড়ে তোলা। এটি বর্তমানে ৫টি বৃহৎ শেকসপিয়রীয় ঐতিহ্যকে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এর অধীনে আছে ৫টি সুন্দর বাড়ি, একটি বাগান যার সঙ্গে শেকসপিয়রের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এগুলো বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এখানে আছে শেকসপিয়র সম্পর্কিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। জাদুঘর ও আর্কাইভ আছে যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এতে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন ডকুমেন্ট, ৫৫ হাজার বই এবং ১২ হাজার মিউজিয়াম অবজেক্ট আছে। রাজকীয় থিয়েটারের জন্যও এটি জগদ্বিখ্যাত।

 

 

তার দর্শন

ধারণা করা হয় শেকসপিয়রের পরিবার ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তখনকার সময়ে এটি ইংল্যান্ডের সম্পূর্ণ আইন বিরোধী ছিল। শেকসপিয়রের মা মেরি আরডেন নিশ্চিতভাবে একটি রক্ষণশীল ক্যাথলিক পরিবার থেকে এসেছিলেন। আর এর দৃঢ় প্রমাণ মেলে তার বাবা জন শেকসপিয়রের স্বাক্ষরিত একটি হলফনামার মাধ্যমে। ওই হলফনামা পাওয়া যায় ১৭৫৭ সালে তাদের হেনলি স্ট্রিটের বাড়িতে। ১৫৯১ সালে কর্তৃপক্ষ জন শেকসপিয়রকে অভিযুক্ত করে ঋণের ভয়ে চার্চ মিস করার অপরাধে। আর এটি সব ক্যাথলিকের একটি সাধারণ অজুহাত ছিল। শেকসপিয়রের মেয়েকেও দেখা গেছে স্কুল জীবনে প্রচলিত ধর্মীয় আচারবিধিতে অনুপস্থিত থাকতে। তাই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, যেহেতু তাদের একটি ভিন্ন ধর্মীয় দর্শন ছিল তাই এমনটা হতো। এমনকি শেকসপিয়র প্রোটেস্টট্যান্ট ফরমুলা অনুসরণ করত বলে ধারণা করা হয়। অনেকটায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডের সদস্য ছিলেন। ওই চার্চেই শেকসপিয়র দম্পতির বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং সন্তানদের ব্যাপ্টিটাইজড করা হয়। শেকসপিয়রকে ওই চার্চে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। অপর গবেষকদের মতে, শেকসপিয়রের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য বিভ্রাট আছে। তার ধর্মীয় দর্শন হিসেবে ক্যাথলিজম, প্রোটেস্টট্যান্টিজম অথবা ধর্মীয় উদাসীনতা সম্পর্কে পক্ষে বিপক্ষে অনেক তথ্যই আছে। তার কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা এখন প্রমাণের যথেষ্ট সুযোগ নেই। এদিকে ব্যক্তিগত দর্শন হিসেবে যৌনতার বিষয়েও শেকসপিয়র ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের। তিনি মাত্র ১৮ বছরের যুবক হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করেছিলেন ২৬ বছরের এক নারীকে। বিয়ে, ভালোবাসা ও সংসারের ক্ষেত্রে নিজের থেকে একটি বড় মেয়েকে সঙ্গী করা তার কাছে কোনো রকম বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তার রচিত সনেটে তরুণের বুকের গভীর ভালোবাসার উদাহরণ স্পষ্ট করা হয়েছে। অপর একটি পয়েন্টে শেকসপিয়র বলেছেন বন্ধুত্ব রোমাঞ্চকর ভালোবাসার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাতে যথার্থই বোঝা যায় সঙ্গীর সঙ্গে শেকসপিয়রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই ছিল বেশি। তার লেখা ‘ডার্ক লেডি’ সনেটে উল্লেখ করা হয়েছে একজন বিবাহিতা নারীর জন্য বৈষম্যমূলক সম্পর্ককে। শেকসপিয়র আসলে সাহিত্যকর্মকে এক অসামান্য পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতা আরোপ করতে সক্ষম হয়েছেন। সবকিছুকে নিজের মধ্যে ধারণ করে চরিত্র সৃজন করেছেন। নিজেই প্রতিটি চরিত্রে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন লেখার মাধ্যমে। একইসঙ্গে অভিনেতা, ব্যবসায়ী এবং মহাজনের মতো ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটেছিল কালজয়ী এই মানুষটির চরিত্রে।

 

 

নির্দয় ব্যবসায়ী

যার হাতের সাহিত্যসুধা পান করে বিশ্ববাসী ৪০০ বছর পরেও দারুণ তৃপ্ত তার মন না জানি কতটা কোমল। তিনি কতই না উদার প্রেমী। হ্যাঁ, শেকসপিয়রের কথাই বলছি। কিন্তু এই কিংবদন্তির সম্পর্কে এই তথ্যও বেরিয়ে এসেছে যে তিনি সাহিত্য রচনার পাশাপাশি নির্দয় ব্যবসায়ীও ছিলেন। মজুদদার, সুদের কারবারি এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য নিয়েও ব্যবসা করেছেন। ওয়ালেসের অ্যারেস্টিথ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এমনটাই দাবি করেছেন। মজুদদার হিসেবে তিনি গম, জব, মাল্ট, বার্লি কিনে গুদামজাত করে রাখতেন। পরবর্তীতে সংকটকালীন সময়ে এলাকার ব্যবসায়ী ও প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করতেন। যারা এগুলো কিনতে অসমর্থ থাকতেন তাদের আবার শেকসপিয়রই টাকা ধার দিতেন। বড় ব্যবসায়ী হিসেবে তার কারবারও বেশি ছিল। আর সেকারণেই সরকারের নজরে তিনি ট্যাক্স চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন। ১৫৯৮ সালে অভাবের সময় শস্য সংগ্রহের অভিযোগও আনা হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে করা চার্জশিট কারও অজানা ছিল না। শেকসপিয়রের রচনাকাল ছিল ষোড়শ শতকের শেষ দিক থেকে সতের শতকের শুরুর সময়টা। এই সময়ে সেখানকার আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত বর্ষা আর তুষারপাতের। আর তাই গরিব চাষিদের জন্য খাবার উৎপাদন ছিল চ্যালেঞ্জ। আর তখন তিনি ব্যবসা করেছেন। 

 

 

গাঁজাপ্রেমী একজন

শব্দবিন্যাসের স্বকীয়তায় শেকসপিয়র সাহিত্যাঙ্গনে সৃষ্টি করেছেন নতুন ধারার সূচনা। তার রচিত হ্যামলেট, ম্যাকবেথের মতো ঐতিহাসিক চিত্রনাট্য আজও জীবন্ত। তার সৃষ্টি সাহিত্যকে এতটায় সমৃদ্ধ করে যে, তাকে ইংরেজি সাহিত্যের বরপুত্রও বলা হয়। সাহিত্যে শব্দ চয়নের এই জাদুকরই নাকি অনেক কাব্য-নাটক লিখেছিলেন গাঁজা খেয়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। আর এই দাবি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। বিভিন্ন জায়গা থেকে তামাক খাওয়ার পাইপ পরীক্ষা করছিলেন তারা।

এভাবেই তাদের হাতে পৌঁছায় উইলিয়াম শেকসপিয়রের সার্স্টফোর্ড অপন অ্যাভনের বাড়ির বাগানে পড়ে থাকা পাইপ। যার বেশ কয়েকটিতে গাঁজার অবশিষ্টাংশ মিলেছে বলে দাবি গবেষকদের।

২০০১ সালে বাগান থেকে মিলেছিল পাইপগুলো। শেকসপিয়র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাঁজা বা ওই জাতীয় কোন গাছের উল্লেখ মিলেছে শেকসপিয়রের রচনাতেও। তার ৭৬ নম্বর সনেটের এক জায়গায় লেখা উইড দিয়ে নাকি গাঁজাকেই বুঝিয়েছেন।

 

 

গোপন পুত্র

ইংরেজি সাহিত্যের রাজাধিরাজ উইলিয়াম শেকসপিয়রের ছিল একজন গোপন পুত্র। সেই পুত্রকে উদ্দেশ করে একটি চতুর্দশপদীও রচনা করেছিলেন এই কিংবদন্তি। এমনই দাবি করা হয় অ্যান্ড্রু স্টারলিংয়ের লেখা শেকসপিয়রের ৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শেকসপিয়রের গোপন পুত্র : ডেভেনান্টের দুর্লভ আত্মজীবনী’ নামে বইয়ে। লেখকের দাবি, শেকসপিয়রের ১২৬ নম্বর সনেট ‘মাই লাভলি বয়’ লেখা হয়েছে পিতৃপরিচয়হীন উইলিয়াম ডেভেনান্টকে নিয়ে। শেকসপিয়র ও ডেভেনান্টের ছবির তুলনা করে দেখা গেছে, দুজনেরই চোখের পাশ ঘেঁষে এবং মুখের আদল একইরকম। স্টারলিং বলেন, সমসাময়িক গুজবও রয়েছে শেকসপিয়র যে ডেভেনান্টের বাবা ছিলেন তা তৎকালীন শেকসপিয়র বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতরাও ধামাচাপা দিতে চাইতেন। কারণ তারা শেকসপিয়রের একেকটি নাটককে সত্যাদর্শ বলে প্রকাশ করতে চাইতেন। যদিও শেকসপিয়র সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার নামে নিজেকে ওই শিশুর ধর্মপিতা পরিচয় দিতেন। ডেভেনান্টের মা ছিলেন জেন ডেভেনান্ট। রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, জেন ডেভেনান্টের স্বামীর নাম জন, যিনি নিরিবিলি ধাঁচের মানুষ ছিলেন এবং মদের ব্যবসা করতেন। উইলিয়াম ডেভেনান্ট জন্মগ্রহণ করেন ১৬০৬ সালে। ডেভেনান্ট ব্যক্তিগত জীবনে বড় নাট্যকার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি শহরের মেয়র পর্যন্ত হন।

 

 

সেরা কিছু উক্তি

♦ পুরো দুনিয়াটাই একটা রঙ্গমঞ্চ, আর প্রতিটি নারী ও পুরুষ সে মঞ্চের অভিনেতা। এই মঞ্চে প্রবেশ পথও আছে আবার বহির্গমন পথও আছে, জীবনে একজন মানুষ এই মঞ্চে অসংখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

♦ আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

♦ ভীরুরা মরার আগে বারে বারে মরে। সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে।

 

♦ মন যদি প্রস্তুত থাকে তাহলে সব কিছুই প্রস্তুত।

 

♦ অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।

 

♦ সবাইকে ভালোবাসুন, খুব কম লোকের ওপর ভরসা রাখুন, কারও প্রতিই ভুল কিছু করবেন না।"

 

♦ অনেক প্রেমদেবতা আছেন যারা তীর দিয়ে খুন করেন, আর কিছু আছেন যারা ফাঁদে ফেলে মারেন।

 

♦ ভালোবাসা হলো অসংখ্য উষ্ণ দীর্ঘশ্বাসের সমন্বয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা।

 

♦ যন্ত্রণা নাও, নিখুঁত হয়ে ওঠ।

 

♦ ভালোবাসার আগুনে পানি উষ্ণ হয়, কিন্তু পানি ভালোবাসার আগুন নেভাতে পারে না।

 

♦ সৎ হওয়া মানে দুনিয়ার হাজারো মানুষের ভিড়ে বাছাইকৃত একজন হওয়া।

 

♦ সত্যিকার ভালোবাসার পথ কখনোই মসৃণ হয় না।

 

♦ তারাই সুখী যারা নিন্দা শুনে এবং নিজেদের সংশোধন করতে পারে।

 

♦ সংসারে কারও ওপর ভরসা কর না, নিজের হাত এবং পায়ের ওপর ভরসা করতে শেখ।

 

♦ জীবন মানে অনিশ্চিত ভ্রমণ।

 

♦ সাফল্যের তিনটি শর্ত। ১— অন্যের থেকে বেশি জানুন। ২— অন্যের থেকে বেশি কাজ করুন। ৩— অন্যের থেকে কম আশা করুন।

 

♦ চিন্তা মুক্ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর