শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবচেয়ে বড় যত মসজিদ

তানভীর আহমেদ

সবচেয়ে বড় যত মসজিদ

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন বহু মসজিদ। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি এসব মসজিদ ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। নান্দনিক নির্মাণশৈলী ও আয়তনে কোনো কোনো মসজিদ মানুষকে বিস্মিত করে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শৈল্পিক অবকাঠামো এই মসজিদগুলোকে করেছে অনন্য। ইতিপূর্বে ধর্মীয়ভাবে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মসজিদের কথা ছাপা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আরও কিছু মসজিদের কথা নিয়ে আজকের রকমারি—

পবিত্র কাবা শরিফ

পবিত্র কোরআন শরিফে বর্ণিত আছে— ‘এটি মানবজাতির জন্য প্রথম মসজিদ, যেখানে মানুষ আল্লাহর উপাসনা করবে।’ সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর এই মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত স্মারক। মসজিদুল হারাম হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এ মসজিদ পবিত্র কাবা শরিফকে ঘিরে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় মুসলিমরা কাবা শরিফের চারদিকে মুখ করে দাঁড়ান। পবিত্র মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। প্রতি বছর পবিত্র হজ এবং ওমরাহর জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদুল হারামে আসেন। দৃষ্টিনন্দন এই কাঠামোটির ভিতরে ও বাইরে নামাজের স্থানসহ মসজিদের সম্পূর্ণ কাঠামো প্রায় ৮৮.২ একর। এখানে একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। আর প্রতি বছর পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখানে উপস্থিত হন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কাবা ঘর সংস্কার করেছিলেন মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশের লোকেরা। এই কাবা শরিফে পরবর্তীতে হাজারে আসওয়াদ নামক পবিত্র পাথর স্থাপন করা হয়। কাবার নিকটবর্তী পাহাড় থেকে গ্রানাইট পাথর দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর ভিত্তিভূমি মার্বেল পাথরের তৈরি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং হজরত ইসমাইল (আ.) একত্রে কাবা ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন। এ জন্যই ঐতিহাসিকভাবে মসজিদুল হারাম গুরুত্ব বহন করে।

অন্যরকম

ইস্তাম্বুলের নীল মসজিদ

ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক মসজিদ সুলতান আহমেদ মসজিদ। মসজিদের ভিতরে ঢুকলে মনে হবে সমুদ্র জলরাশির রঙে রাঙানো। ভিতরের দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাইরে থেকে এই নীল রঙের ঝিলিক দেখে অনেকেই একে বলেন ‘ব্লু মস্ক’ বা নীল মসজিদ। ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদ্রাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত। যদিও বর্তমানে এটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মসজিদটি ইস্তাম্বুুলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।

দিল্লির জামা মসজিদ

দিল্লির জামা মসজিদ বিশ্বজুড়ে নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদগুলোর একটি। মসজিদের ফাটলে এবং তার সিঁড়ি ও গম্বুজের ওপরে শত শত পায়রার বসতি স্থাপন করার দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। জামা মসজিদে একসঙ্গে ২৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। দিনে মসজিদের সমৃদ্ধ স্থাপত্য নকশা অধ্যয়নের জন্য খোলা থাকে। মসজিদটির নির্মাণ কাজ ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় এবং ১৬৫৬-এ শেষ হয়। মসজিদের প্রাঙ্গণের তিন দিক থেকে উন্মুক্ত দ্বার রয়েছে। পূর্বদিকের দ্বারের ছাদটির ওপর মৌচাকের মতো খোদাই করা খিলান নির্মিত। বেশ কিছু ছোট সুদৃশ্য গম্বুজ দ্বারা সুসজ্জিত করা।

 

পাকিস্তানের গ্র্যান্ড জামে মসজিদ

পাকিস্তানের লাহোরের বহিরা শহর। সেখানেই রয়েছে গ্র্যান্ড জামে মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদে ৭০ হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। পাকিস্তানের তৃতীয় ও বিশ্বের সপ্তম বড় মসজিদ এটি। নায়ার আলী দাদা এই মসজিদের নকশা করেন। ২০১৪ সালে ঈদুল আজহায় এই মসজিদ যাত্রা শুরু করে। মসজিদের ভিতরে ২৫ হাজার ও মসজিদ প্রাঙ্গণে আরও ৫০ হাজার মুসল্লি জমায়েত হতে পারেন।  বিশাল এই মসজিদ তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর রয়েছে চারটি মিনার। পুরো মসজিদে ব্যবহৃত হয়েছে ৪০ লাখ মুলতানি টাইলস। তুর্কি থেকে আনা হয়েছে চমৎকার কার্পেট; ইরান থেকে ৫০টি ঝাড়বাতি।

দৃষ্টিনন্দন

হাসানাল বলখিয়া মসজিদ

মসজিদটি সুলতান হাসানাল বলখিয়া মুজাদিন ওয়াদ্দুল্লাহর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি ব্রুনাইয়ে অবস্থিত। দেশটির সুলতানের সিংহাসন আরোহণের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে ব্রুনাইবাসীর প্রতি সুলতানের উপহার ছিল। এখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

আয়তনে মসজিদটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়

ইরানের মাশহাদে রয়েছে ইমাম রেজার মাজার। মাজার শরিফের ভবনটিতে একটি জাদুঘর রয়েছে। আয়তনে এই মসজিদটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ। অবশ্য ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বড় মসজিদ এটি। ভবনটির সঙ্গে ঘোহারশাদ মসজিদ, একটি জাদুঘর, একটি পাঠাগার, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি সমাধিক্ষেত্র, রাজাভি ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক সায়েন্সেস, জিয়ারতকারীদের জন্য খাবার ঘর, সালাত আদায়ের জন্য বিশাল কক্ষ এবং আরও অনেক ভবন রয়েছে। আয়তনের হিসাবটি এসব ভবন ও তার প্রাঙ্গণ যোগ করে ধরা হয়েছে। ইরানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ইমাম রেজার মাজার ভবনটি অন্যতম একটি। মাজার ভবনটির আয়তন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮ মিটার। মাজারের সাতটি প্রাঙ্গণের আয়তন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৭৮ মিটার। মোট ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৭ মিটার। পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদটির নাম বালা সার মসজিদ। বালা সার মসজিদটি মাহমুদ গজনির শাসনামলের সময় নির্মিত হয়েছিল।

ঐতিহাসিক মাটির মসজিদ

গ্র্যান্ড মসজিদ। মসজিদটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ এটি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির ডিজেনি শহরে এর অবস্থান। নির্মাণকাল সম্পর্কে ঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মিত হয়েছে বলে অধিকাংশ গবেষক দাবি করেন। তবে বর্তমানে যে কাঠামোটি দেখা যায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯০৭ সালে। আর ইউনেস্কো মসজিদসহ এর চারপাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৮ সালে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন। গ্রেট মস্ক নামে সুপরিচিত এই মসজিদটি তৈরিতে রোদে পোড়া ইট ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘ফেরি’। বাইরে থেকে প্লাস্টার করে মসজিদটির দেয়াল নিখুঁত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর