শিরোনাম
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাজহাবের মাঝে অমর যাঁরা

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

মাজহাবের মূল কথা

ইসলামের ইতিহাস, বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক রীতি এবং জীবনাচারের মূল ভিত্তি পবিত্র কোরআন। এ মহাগ্রন্থ স্বয়ং আল্লাহ রচিত এবং সব ধরনের সন্দেহ, বিতর্ক বা বিকৃতির ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআন পৃথিবীতে নাজিল হয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। মহানবী (সা.) ৪০ বছর এক দিন বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হন, ৬৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। এই ২৩ বছরে তাঁর বাণী এবং জীবনাচার গ্রন্থিত হয়েছে হাদিস আকারে। এই হাদিসের অসংখ্য সূত্র রয়েছে। যেমন : তাঁর নিকটাত্মীয়, খলিফা, সাহাবি, সাহাবিদের শিষ্য প্রত্যক্ষদর্শী এমন অনেকের কাছ থেকে হাদিসের উৎপত্তির ফলে বিশুদ্ধ হাদিসের পাশাপাশি কিছু দুর্বল হাদিসের সন্ধান পাওয়া যায়, আবার ইসলামের শত্রুরা বিতর্ক এবং ভেদাভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যেও কিছু হাদিস বিকৃত করে প্রচারে সচেষ্ট হয়। ফলে ইসলামের বিচার, সামাজিক জীবন এবং প্রার্থনার রীতিনীতিতে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এমনই এক প্রেক্ষাপটে খ্রিস্টীয় নবম থেকে দ্বাদশ শতকে ‘ইমাম’ নামে পরিচিতি পাওয়া একদল ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক বিভিন্ন বই এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত প্রচার করেন। তবে চারজন ইমাম এই মতবাদ প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। ইসলামের প্রথম দিকের ইমামদের মতবাদ আমাদের মাঝে মাজহাব নামে পরিচিতি লাভ করে। মাজহাব আরবি জাহাব শব্দ থেকে এসেছে বলে একদল গবেষকের ধারণা, যার অর্থ মূল বা রুট। আবার অনেকের মতে, মাজহাব হলো মতবাদ, জীবনাদর্শ, কর্মপদ্ধতি ইত্যাদি। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান কোনো না কোনো মাজহাব অনুসরণ করেন। আবার কোরআন ও শুদ্ধ হাদিসই যেহেতু মাজহাবের ভিত্তি এবং কোরআন ও শুদ্ধ হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় অগ্রহণযোগ্য, সেহেতু মাজহাব মানা বা না মানা কোনো বিষয়ই নয় বলেও মনে করেন অনেকে। কোরআন হাদিসের বাইরে ‘ইজমা’ বা ইসলামী আইনের বিষয়ে বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদদের সম্মিলিত মতামত কিংবা ‘কিয়াস’ বা তুলনামূলক বিচারে গ্রহণীয়, বর্জনীয় বা সংকুচিত চিন্তাধারাকেও মতবাদ বা মাজহাবের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন মাজহাব প্রবক্তা ইমামগণ। তবে গুরুত্ব প্রদান বা অগ্রগণ্যতার ক্ষেত্রে কোরআন ও শুদ্ধ হাদিসের পরে অন্যান্য বিষয়কে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে তাদের মাঝে। মাজহাব মানা কোনো ফরজ বা সুন্নত না হলেও অনেকে বলেন, মাজহাব মানা ওয়াজিব।

 

ইমামে আযম আবু হানিফা (রহ.), হানাফী মাজহাব

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মুসলমানদের মধ্যে সুন্নি মতবাদে বিশ্বাসীদের মাঝে ধ্রুবতারার মতো আবির্ভূত হন ইমাম আবু হানিফা আল নোমান বিন সাবিত সংক্ষেপে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)। উমাইয়া বংশের শাসনকালে খলিফা আবদুল মালিক আর মারওয়ানের আমলে ইরাকের কুফা নগরে ৬৯৯ সালে জন্ম নেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)। তার বাবা সাবিত বিন যুতা ছিলেন বর্তমান আফগানিস্তানের বাসিন্দা। সিল্ক কাপড়ের ব্যবসা করে বাবা সাবিত তখন সমৃদ্ধি অর্জন করেন এবং ইরাকের কুফায় বসতি স্থাপন করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর বাল্যশিক্ষা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। একদল গবেষকের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রচলিত শিক্ষার বদলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) অল্প বয়সে বাবার সঙ্গে ব্যবসায়িক কাজে যুক্ত হন এবং বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। অন্যদের মতে, ইমামে আযম আবু হানিফা (রহ.) বাল্যকালেই ইসলাম ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। এ সময় ইরাক বিশেষত কুফা নগরী ইসলামী জ্ঞানচর্চার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে যে, কুফায় বাবার ব্যবসা দেখাশোনার সময় ইমাম আল সাবি নামক একজন আলেম তাকে ইসলামী জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেন। ইমাম আল সাবির কাছে তিনি প্রতিদিন মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত নিয়মিত পড়ালেখা করতেন এবং অন্য সময়েও যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন এই ইমামের সান্নিধ্যে থেকে ইসলাম ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ইমাম হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইমাম হাম্মাদ ইবনে সুলাইমানের মৃত্যু ঘটে। ফলে তার কর্মস্থল তথা সেখানকার মাদ্রাসাপ্রধানের বা অধ্যক্ষের পদ শূন্য হয়ে যায়। উপস্থিত সবাই তখন সর্বসম্মতভাবে ১৮ বছর বয়সী ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কেই মাদ্রাসাপ্রধানের দায়িত্ব প্রদান করেন, যা তিনি যথাযথভাবে পালন করেন। আরেক দল গবেষকের মতে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) জ্ঞান অর্জনের জন্য মক্কা ও মদিনায় গমন করেন এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বেশ কয়েকজন সাহাবির সান্নিধ্যে অসাধারণ ও অকৃত্রিম বা অবিকৃত ইসলামী জ্ঞান লাভ করেন। মতান্তরে ১২, ৭ অথবা ৪ জন সাহাবির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল বলেও বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ আছে। তবে বয়স বিবেচনায় বলা যায়, বাল্যকালেই তিনি সাহাবিদের সান্নিধ্য লাভ করেন। এ ক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গী ও সাহাবি ইমাম আনাস বিন মালিক (রহ.) এর অধীনে তার জ্ঞানচর্চার বিষয়টি বহুল প্রচলিত। সুন্নি মতবাদের অন্যতম পুরোধা ইমাম আনাস বিন মালিক (রহ.) এর মাজার ইরাকের বশরায় অবস্থিত। তাই ধারণা করা হয়, তার কাছ থেকেই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সুন্নি মতবাদের মূল দীক্ষা লাভ করেন। এক বা একাধিক সাহাবির শিষ্য হিসেবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কে ‘তাবেঈন’ হিসেবেও গণ্য করা হয়। তিনি নিজে তাবেঈন হয়েও আরও ৯৩ জন তাবেঈন বা সাহাবির কাছে ইসলাম ধর্ম শিক্ষালাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি তাবেঈনদের শিষ্য যারা, ‘তাবে তাবেঈন’ নামে পরিচিত, এমন অসংখ্য আলেম ও ইসলামের নেতৃস্থানীয়দের পেছনে জ্ঞানের অন্বেষণে দিনের পর দিন ছুটে বেড়িয়েছেন। সর্বসাকুল্যে তিনি প্রায় ৪ হাজার ধর্মগুরুর কাছ থেকে ইসলামের মূল রীতিনীতি শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অগণিত ছাত্র বা শিষ্যের মাধ্যমে তা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেন। শুধু ইসলামী জ্ঞানই নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষত প্রকৌশলগত কাজ এবং নগর পরিকল্পনায় ইমাম আবু হানিফার (রহ.) পান্ডিত্য সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসিত ছিল। বিশ্বব্যাপী সাধারণ মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বরণীয় হলেও রাজ-রাজা, বাদশা বা সম্রাটদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। তিনি রাজা-বাদশাদের ভোগবাদী জীবনের কট্টর সমালোচক ছিলেন। সরল ও ন্যায় বিচারক হিসেবে তিনি কারও করুণা লাভের আশায় সত্য বলতে বা উপযুক্ত রায় কিংবা ব্যাখ্যা দিতে কখনো পিছপা হতেন না। তিনি সৎভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় বিভিন্ন রাজকীয় চাকরি (পোস্ট বা অপয়েন্টমেন্ট) প্রত্যাখ্যান করেন। সম্রাট আল মনসুর তাকে প্রধান বিচারপতি হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন যে, প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য তিনি যোগ্য নন। আল মনসুর এরপর তাকে মিথ্যাবাদী বলায় তিনি জোরালো কণ্ঠে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, মিথ্যুক কখনো প্রধান বিচারপতি হতে পারে না। সুতরাং তিনি যে প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য নন, তা সত্য। ক্ষিপ্ত সম্রাট আল মনসুর এরপর ইমাম আবু হানিফাকে জেলে পাঠান। জেলেও অন্য বন্দীদের মাঝে তিনি দীনের আলো ছড়িয়ে দেন। জীবনের শেষ দিনগুলো তার জেলেই কাটে। কোনো কোনো গ্রন্থমতে, শাস্তি হিসেবে তাকে দিনে ১০টি করে ১১ দিনে ১১০ বার চাবুকাঘাত করা হয়। সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও চাবুকের আঘাত সহ্য করেও তিনি ন্যায়ের পথে ছিলেন বলে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে। ৭৬৭ সালের ১৫ আগস্ট সেজদারত অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু ঘটেছে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাশীল সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার উসকানি দেওয়ার অভিযোগও ছিল বলে কিছু কিছু গ্রন্থে উল্লিখিত রয়েছে। তার মৃত্যুর সংবাদে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত-শিষ্য ও অনুসারী বাগদাদে ভিড় জমান। ভিড় সামাল দিতে ছয়বার তার জানাজা পড়তে হয়, যেখানে অর্ধ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। মৃত্যুর পর প্রায় ২০ দিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান বাগদাদে এসে বিশেষ ইবাদত ও নামাজের মাধ্যমে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। ৬৮ বছরের জীবনে তিনি ৫৫ বার হজ করেন। ‘ফিকাহ আল আকবর’ তার রচিত অনন্য গ্রন্থ, যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ সমাদৃত এবং ইসলামী রীতিনীতি বিচার ব্যবস্থার প্রামাণ্য দলিল। এ ছাড়াও তার অন্তত ১০টি বই ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ সম্পদ। তার অনুসারীদের মাধ্যমে যে মাজহাব আজও বিদ্যমান, তা ‘হানাফি মাজহাব’ নামে পরিচিত। আমেরিকার জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক জন লুইস এসপোসিটোর মতে, পৃথিবীর ৪১% মুসলমান ‘হানাফি মাজহাব’ অনুসরণ করে অথবা ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ভক্ত ও সমর্থক।

 

ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.), মালিকী মাজহাব

ইসলামের ইতিহাসে প্রাচীনতম হাদিস সংগ্রহকারীদের একজন ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)। তার পূর্বপুরুষরা হিজরি দ্বিতীয় সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইয়েমেন ছেড়ে মদিনায় বসবাস শুরু করেন। এখানেই হিজরি ৯৩ সালে বা ইংরেজি ৭১১ সালে বাবা আনাস ইবনে মালিক এবং মা আলিয়া বিনতে সুরাইয়ার ঘরে জন্ম হয় ইমাম মালিক ইবনে আনাসের। সংক্ষেপে ইমাম মালিক (রহ.) তার দাদা মালিক ইবনে আবি আমির ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এর ছাত্র ছিলেন এবং সেই আমলে পশুর চামড়ায় লেখা কোরআনের বাণী বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইমাম মালিক (রহ.) ছিলেন ফর্সা ও লম্বা। সাদা চুল-দাড়ি ও নীল চোখের কারণে তার মাঝে স্বর্গীয় দ্যুতি লক্ষ্য করা যেত। বাল্যকালেই তিনি কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। এরপর ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ আরও অনেক প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও জ্ঞানী ব্যক্তির কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষালাভ করেন। কথিত আছে যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় মদিনায় অত্যন্ত জ্ঞানী ইসলামী চিন্তাবিদের আবির্ভাব সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনিই ইমাম মালিক (রহ.)। ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্মের ওপর অনবদ্য জ্ঞানের কারণে অন্যদের ইসলামী শিক্ষা প্রদানের এবং ফতোয়া প্রদানের স্বীকৃতি লাভ করেন। ৪০ বছর যাবৎ তিনি বিভিন্ন উৎস থেকে বিশুদ্ধ হাদিস সংগ্রহে নিবেদিত ছিলেন। তবে বিশুদ্ধতার বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজাগ। অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হলেও তিনি নিশ্চিত না হয়ে কোনো কিছু বলতেন না এবং অজু না থাকলে কোনো হাদিস উচ্চারণ করতেন না। প্রত্যক্ষদর্শী আল হাতিমের বর্ণনায় জানা যায় যে, একদিন ইমাম মালিক (রহ.) কে ৪৮টি প্রশ্ন করা হলে ৩২ বারই উত্তর জানা নেই বলেন এবং নিশ্চিত হওয়ায় মাত্র ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। আবু মুসআব নামক আরেক বর্ণনাকারীর মতে, ইমাম মালিক (রহ.) ৭০ জন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও গুরুর কাছে পরীক্ষা দিয়ে নিজের জ্ঞান সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হন এবং পরবর্তীতে হাদিস বর্ণনা ও ফতোয়া দেওয়া শুরু করেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের সাধনায় তিনি প্রায় ১০ হাজার হাদিস সংগ্রহ করলেও বিশুদ্ধতার কথা মাথায় রেখে মাত্র ২ হাজার হাদিস বর্ণনা করেন। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সর্বমোট ৯টি গ্রন্থের বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হলো আল মুয়াত্তা। মুয়াত্তা শব্দের অর্থ অনুমোদিত। বিশুদ্ধতার কারণে এই বই তথা ইমাম মালিক (রহ.) এর সব সংগ্রহ ও প্রকাশনাকে ‘গোল্ডেন চেইন’ বলে অভিহিত করেছেন একাধিক ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক। পরবর্তীতে তার পথ ধরে অনেক গবেষক ও হাদিস সংগ্রহকারীর জন্ম হয়। তার সন্তানরাও ইসলামী জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় খ্যাতিমান ছিলেন। তার অন্যতম ছাত্র ইমাম আল শাফী (রহ.) পবিত্র কোরআনের পর ইমাম মালিক (রহ.) রচিত ‘আল মুয়াত্তাকে বিশুদ্ধতম বই হিসেবে গণ্য করেন। এ ছাড়াও তাকে ইসলামী জ্ঞানের আকাশে ধ্রুবতারা বা পথনির্দেশক বলে গণ্য করা হয়।

হিজরি ১৭৯ সালের ১০ রবিউল আউয়াল (সোমবার) তথা ইংরেজি ৭৯৫ সালে ২২ দিন রোগ ভোগের পর মৃত্যুবরণ করেন। এই প্রখ্যাত হাদিস সংগ্রহকারীকে মসজিদ-ই নববীর নিকটবর্তী জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে কবরের ওপর একটি স্থাপনা নির্মিত হলেও ১৯৩২ সালে অন্য সব মাজারের সঙ্গে এই স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়, তবুও ইমাম মালিক (রহ.) বেঁচে আছেন হাদিস বইয়ের পাতায় পাতায় এবং ইসলামী বিচার ব্যবস্থার ওপর রচিত সব বইয়ে। তবে হাদিস সংগ্রহকারী পরিচয়ের বাইরে ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.) এর অন্যতম পরিচয় ইসলামের চারটি মূলধারার অন্যতম মালিকী মাজহাবের তাত্ত্বিক গুরু বা প্রবর্তক হিসেবে। এখানে উল্লেখ্য, মদিনার অধিবাসী হিসেবে তিনি ইসলামী চিন্তাধারার অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ করেন। সহি হাদিস সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় শুধু মদিনাতেই আবু সুহাইর নাফি ইবনে আবদুর রহমান, হিসাম ইবনে উড়য়াহ, ইবনে সিহাব আল জুহুরীর মতো ইসলামী সাধকদের সান্নিধ্য লাভ করেন। মালিকী মাজহাব বা মতবাদের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গী ছিলেন খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রা.)। তার পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রহ.) এর মাধ্যমে ইসলামের মর্মবাণী আয়ত্ত করেন আরেক প্রখ্যাত ইসলামী সাধক নাফী মাওলা ইবনে ওমর (রহ.)। এ সাধকের (নাফী মাওলার) সংকলিত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.) এক পরিপূর্ণ মতাদর্শের গোড়াপত্তন করেন, যা আজকের দিনে মালিকী মাজহাব নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই মতবাদ অনুসারীদের বেশি দেখা যায় উত্তর আফ্রিকা, স্পেনের একটি অংশ, মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন অংশে। ইমাম মালিক ইবনে আনাস প্রথমত কোরআন এবং অনুমোদিত বা অবিতর্কিত ও অবিকৃত হাদিসকে প্রাধান্য দেন। তাই পবিত্র কোরআনের বাণী উচ্চারণ করতে করতে তিনি পৃথিবী ছেড়ে অনন্ত জগতে প্রবেশ করেন।

 

ইমাম শাফী (রহ.), শাফী মাজহাব

ইসলামের ইতিহাসে আরব দেশের কোরাইশ বংশ এক মর্যাদাপূর্ণ এবং অনন্য অবস্থান লাভ করেছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের কারণে। এই কোরাইশ বংশেরই পরবর্তী ধারায় ৭৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আল শাফী (সংক্ষেপে ইমাম শাফী, (রহ.)। ইসলামী জগতে বিরাজমান চার মাজহাবের প্রখ্যাত চার ইমামের মধ্যে কুরাইশ বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে ইমাম শাফী (রহ.) এর গ্রহণযোগ্যতা ভিন্নমাত্রা লাভ করেছে।

ইমাম শাফী (রহ.) বর্তমান প্যালেস্টাইনের গাজা ভূখন্ডে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে বাবাকে হারিয়ে দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে মায়ের কাছে বড় হন ইমাম শাফী (রহ.)। তার মা সন্তানের বংশমর্যাদার কথা বিবেচনা করে মক্কায় চলে আসেন। মক্কা ও মদিনায় ইমাম শাফী (রহ.) শুদ্ধ ইসলামী জ্ঞানলাভ শুরু করেন। মাত্র ৭ (মতান্তরে ৯) বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। দরিদ্রতার কারণে তার পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করা সম্ভব না হলেও কেবল অন্যদের পড়া অনুসরণ করে কিংবা পাশে বসে অন্যদের পাঠদান লক্ষ্য করেই তিনি ইসলামী জ্ঞানে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। অন্যরা যখন কাগজে লিখে শিখতেন, ইমাম শাফী (রহ.) পাথর বা পশুর হাড়ে সেই লেখা লিখে সবাইকে চমকে দিতেন। তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামী পন্ডিতরা তাকে বিনা বেতনে পড়ানো শুরু করেন এবং কোনো শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ইমাম শাফী (রহ.) কে পড়ানোর অনুমতি দেন। মাত্র ১৫ বছর মতান্তরে (১৮ বছর) বয়সে তিনি ইসলামী বিষয়ে ফয়সালা বা ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি লাভ করেন। এ সময় তিনি মদিনায় অবস্থানরত ইসলামের আরেক নক্ষত্র ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)-এর জ্ঞান ও প্রতিভার বিষয়ে অবগত হন এবং ইমাম মালিক (রহ.)-এর শিষ্য হওয়ার শপথ নেন। এ উদ্দেশ্যে ইমাম শাফী (রহ.) মদিনা গমনের আগে মাত্র ৯ দিনে ইমাম মালিক (রহ.) সংকলিত হাদিস গ্রন্থ (আল মুয়াত্তা) মুখস্থ করেন। মদিনায় পৌঁছার পর ইমাম শাফীর প্রতিভা ও সংগ্রামে মুগ্ধ ইমাম মালিক (রহ.) তাকে বিশেষ স্নেহে দীর্ঘ ৯ বছর জ্ঞান বিতরণ করেন। ৯ বছর পর ইমাম মালিক (রহ.)-এর মৃত্যু ঘটলে ইমাম শাফী (রহ.) মক্কায় ফিরে আসেন এবং বিশেষভাবে সমাদৃত হন।

ইয়েমেনের তৎকালীন গভর্নর মক্কায় সফরকালে ইমাম শাফী (রহ.) এর জ্ঞান ও প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজ দেশের নাজরান অঞ্চলের গভর্নর নিযুক্ত করেন। এ সময় সিরিয়ার খালিফা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে ইমাম শাফী (রহ.) এর জড়িত থাকার কথিত অভিযোগ উত্থাপিত হয়। পরে এ অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে আবারও জ্ঞান সাধনা বিশেষত ইসলামী আইন বিষয়ে গবেষণায় লিপ্ত হন। পবিত্র মক্কায় তিনি ইসলামী আইন বিষয়ে ক্রমাগত বক্তৃতা করে প্রসিদ্ধ হন। ৮১০ সালে তিনি ইসলামী জ্ঞানের আরেক ভা-ার ইরাকের বাগদাদ গমন করেন এবং ৪ বছর জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান বিতরণে আত্মনিয়োগ করেন।

এ সময় বাগদাদের খলিফা আল মামুন ইমাম শাফী (রহ.) কে বিচারক হওয়ার প্রস্তাব করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে ৮১৪ সালে মিসরে গমন করেন। এখানে তিনি মিসরীয় নারী সাইদা নাফিসা বিনতে আল হাসানের আশ্রয় লাভ করেন। সাইদা নাফিসা জন্মসূত্রে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধর ছিলেন এবং ইসলামী জ্ঞান ও ধনসম্পদে যুগপৎ সমৃদ্ধ ছিলেন। এই মহীয়সী নারীর পৃষ্ঠপোষকতায় ইমাম সাফি (রহ.) এর শিষ্যরা একাধিক বই রচনা করেন। ইমাম শাফী (রহ.) এসব বইয়ের খসড়া শুদ্ধ করে দিলে তা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হতো। ইমাম শাফী (রহ.) এর এ ধরনের ৮টি বইসহ অন্যান্য রচনা ইসলামের ইতিহাসে আজ এক অনন্য সম্পদ ও ইসলামী আইন ও ফতোয়ার অন্যতম সূত্র বা রেফারেন্স।

ইমাম শাফী (রহ.) এর মৃত্যুর নেপথ্যে কারণ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। একদল গবেষক মনে করেন যে, একটি বিষয়ে মতামত বা ফতোয়া দিয়ে তিনি আরেকজন প্রখ্যাত ইমাম মালিক (রহ.) এর অনুসারীদের বিরাগভাজন হন। মিসরের তৎকালীন গভর্নর ইমাম শাফী (রহ.) এর গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি বিরুদ্ধাচরণকারীদের রাজপথে সাজা দিলে ইমাম মালিক (রহ.) সমর্থকরা বিরাগভাজন হয় এবং একটি ইসলামী জলসা শেষে ইমাম শাফী (রহ.) কে আক্রমণ করেন। এই আক্রমণের কিছুদিন পরেই ইমাম শাফী (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন। অন্য গবেষকদের মতে, পেটের পীড়ায় ইমাম শাফী (রহ.) ৫৪ বছর বয়সে ৮২০ সালের ২০ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

মিসরের তৎকালীন গভর্নর নিজ ইমামতিতে জানাজা নামাজ শেষে রাজধানী কায়রোর নিকটবর্তী মুকাত্তাম পর্বতমালার পাদদেশে তাকে সমাহিত করেন। পরবর্তীতে ইমাম শাফী (রহ.) এর সমাধিতে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ইসলামী জ্ঞানচর্চায় অনন্য অবদানের জন্য তাকে শাঈখ আল ইসলাম, (অর্থ : ইসলামের নেতা) এবং ‘নাসির আল হাদিস’ (অর্থ : হাদিস সংরক্ষক) নামে সম্মানিত করা হয়। মিসর, ইয়েমেন, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতে ইমাম শাফী (রহ.)-এর বিপুল অনুসারী রয়েছেন।

 

ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.), হাম্বলী মাজহাব

ইসলামের পুণ্যভূমি মক্কা ও মদিনা শহরকে নিয়ে গড়ে ওঠা সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে ইসলামী রীতিনীতি ও জীবনাচারের যে সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়, তার নেপথ্যে রয়েছে ইমাম আবু আবদুল্লাহ আহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল; সংক্ষেপে ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মাজহাব বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তার পূর্বপুরুষ ইরাকের বশরায় বসবাস করতেন এবং পিতা আব্বাসীয় আমলে সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে বাগদাদে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই ৭৮০ সালের নভেম্বর মাসে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম আবু হানিফার শিষ্য ও প্রখ্যাত বিচারক আবু ইউসুফসহ বিভিন্ন পন্ডিতের কাছ থেকে তিনি ইসলামী বিষয়ে নানা ধরনের জ্ঞানলাভ করেন। প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর ইরাক ও সিরিয়াসহ আরব জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি শুদ্ধ হাদিস এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাচরণের যথাযথ ঐতিহ্যের সন্ধানে ব্রত হন। গবেষকদের মতে, ৪১৪ জন বিশিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য হাদিস বিশারদের কাছ থেকে ইবনে হাম্বল ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। সম্রাট হারুন অর রশীদের সময়ে কোরআন ও হাদিসের বাইরে ইসলামী চিন্তাবিদদের সম্মিলিত মতবাদ বা রায়কে ইসলামের বিধান হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রথা চালুর প্রচেষ্টা হয়। তৎকালীন রাজা-বাদশা-সম্রাটগণ তাদের পদ-পদবি ও শাসন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধর্মকে নিজ সুবিধামতো ব্যাখ্যা করার এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে সচেষ্টা হন। এ ক্ষেত্রে তারা একদল ইমাম ও ইসলামী চিন্তাবিদকেও সংগঠিত করেন। তবে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) তীব্র কণ্ঠে এর প্রতিবাদ করেন এবং গোঁড়া মুসলমান হিসেবে কোরআনের শাব্দিক অর্থের বাইরে অন্য কিছুর স্বীকৃতি বা ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ পরিহার করেন। এ কারণে তিনি শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হলেও সত্য বলতে এবং কোরআনের বাইরে কোনো কিছুর চিন্তা প্রতিহত করতে সচেষ্ট থাকেন। সম্রাট হারুন অর রশীদ এ কারণে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে অন্যায়ভাবে জেলখানায় বন্দী করে রাখেন। সম্রাট হারুন অর রশীদের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী সম্রাট আল মুতাসীমের সময়ও কারাগারে বন্দী থাকেন ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.)। এ সময় তাকে চাবুকাঘাত করার অভিযোগ ওঠে। এর ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে গণদাবির মুখে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। সম্রাট আল মুতাসীমের মৃত্যুর পর সম্রাট আল ওয়াথিক রাজনৈতিক স্বার্থে ইমামদের ব্যাখ্যা গ্রহণের রীতি অব্যাহত রাখেন এবং এক্ষেত্রে বাধা হতে পারে মনে করে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) কে বাগদাদ থেকে বিতাড়িত করেন। সম্রাট আল ওয়াথিকের মৃত্যুর পর তারই ভাই আল মোতওয়াক্কী সম্রাট হন এবং গোঁড়া সুন্নিদের প্রতি নমনীয়তা প্রকাশ করে ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.) কে বাগদাদে ফেরত আনেন।

জীবদ্দশায় ১৫টিরও বেশি বই রচনা করেন ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.)। ২ আগস্ট ৮৫৫ সাল, শুক্রবারে ৭৪ (মতান্তরে ৭৫) বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ.)। বাস্তব জীবনে তিনি এক সময় পেশাদার সৈন্য ছিলেন এবং সম্মুখ রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। ইসলামের মর্মবাণী কোনো প্রকার বিকৃতি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অকুতোভয়। জীবনে তিনি পাঁচবার হজ করেন বলে জানা যায়, যার মধ্যে দুবার হেঁটে হজ করার তথ্য রয়েছে। তার জানাজায় প্রায় ৮ লাখ পুরুষ অংশগ্রহণ করেন এবং ৬০ হাজার মহিলা তৎকালীন প্রচলিত নিয়মে শোক প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও তার মৃত্যুর দিনে ২০ হাজার খ্রিস্টান ও ইহুদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর