শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

নারী শিক্ষার অনন্য বিদ্যাপীঠ

নারী শিক্ষার অনন্য বিদ্যাপীঠ

ডাকাতিয়া একটি ছোট নদীর নাম। নদীর তীরে লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ। কলেজ মাঠের পূর্ব পাশে আমতলা। এখানে পাকা বেঞ্চি কিংবা ঘাসের উপরে বসে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। এখানে বসলে শোনা যায় ডাকাতিয়া নদীর কুলকুল ধ্বনি। আমগাছের ডাল থেকে শোনা যায় চেনা-অচেনা পাখির ডাক। এ ছাড়া মাঠের পশ্চিম পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের তলেও আড্ডা বসে। কলেজসংলগ্ন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ের ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি। এ বাড়ির সন্তান মহীয়সী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। নওয়াব ফয়জুন্নেছা পাক-ভারত উপমহাদেশের এক অনন্য ব্যক্তিত্বের নাম, তিনি ছিলেন জমিদার, সমাজকর্মী ও সাহিত্যসেবী। তার অনন্য ভূমিকা রয়েছে নারী শিক্ষা প্রসারেও। ১৮৭৩ সালে তিনি কুমিল্লায় স্থাপন করেন বালিকা বিদ্যালয়। বাংলাদেশে মুসলিম নারী শিক্ষার জন্য এটি প্রথম স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। শুধু বালিকা বিদ্যালয়ই নয়, ছেলেদের জন্যও স্থাপন করেছেন মাদ্রাসা, মক্তব ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার কয়েকটি এখন হাইস্কুল এবং ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি তার হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবাকর্ম ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশ, ভারত ও সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্তে।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ সূত্র জানায়, নওয়াব ফয়জুন্নেছা ১৯০১ সালে পশ্চিমগাঁওয়ের নিজ বাড়ির আঙিনায় একটি অবৈতনিক ফয়েজিয়া মাদ্ররাসা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এটি ১৯৪৩ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৪ সালে কলেজটি ডিগ্রিতে উন্নীত হয়। ১৯৮২ সালের ১ মে কলেজটি সরকারি কলেজের স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে ৮.১১ একর জমিতে কলেজ মাঠ, ভবন ও হল অবস্থিত। ১৯৯৮ সালে কলেজটি অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট ও প্রাণীবিদ্যা ৩টি বিষয়ে অনার্সর্ কোর্সের অনুমতি পায়। ২০১২ সালে অনুমতি পায় গণিত ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স কোর্স। আগামী শিক্ষাবর্ষে অনুমতি পেতে পারে ইংরেজি, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে। কলেজের বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক। ৬৫ শিক্ষকের পদে বর্তমানে রয়েছেন ৫০ জন। সহযোগী অধ্যাপক ১৩ জনের মধ্যে ১১ জন রয়েছেন। প্রভাষক ৩৩ জনে রয়েছেন ১৮ জন। শরীরচর্চা ও লাইব্রেরিয়ানের পদ ২টি শূন্য রয়েছে। দক্ষিণ কুমিল্লার চার উপজেলা লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোটের একমাত্র সরকারি কলেজ লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ। কলেজটিতে বিদ্যমান নানা সমস্যা সত্ত্বেও এটির সুনাম রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। ম্যানেজমেন্ট চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজমুল হাসান রনি বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের ক্যাম্পাস সব সময় সরগরম থাকে। এখানে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় উঠে আসে পড়াশোনা, সাংস্কৃতিক বিষয় ও সমকালীন রাজনীতি। কলেজের বিএসএসের ছাত্র নওশেদ কবীর শাহীন বলেন, আমতলা এবং কৃষ্ণচূড়ার তলায় আমাদের আড্ডা জমে। খেলার মাঠটি খানাখন্দকে ভরপুর। খেলার মাঠের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নারী শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকার পরও নওয়াব ফয়জুন্নেছাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ধীরেশ রঞ্জন ভৌমিক জানান, 'হল, শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষক আবাসনের সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-জনবল সংকট ও আবাসনসহ নানা সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।'

* মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা প্রতিনিধি

 

 

 

সর্বশেষ খবর