শিরোনাম
শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

বৈচিত্রময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয়

বৈচিত্রময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারিভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এটিই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম সরকারি ঘোষণা। ১৯৭৭ সালে মক্কা শরিফে ওআইসির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ওআইসি এবং বিভিন্ন মুসলমান রাষ্ট্রের অর্থায়নে এশিয়ার তিনটি মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়ার সীমান্ত স্থান বর্তমানে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার সীমান্ত শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে বর্তমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ইসলামী আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০(৩৭) পাস হয়। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে ৫টি অনুষদ, ২২টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ১টি স্কুল, প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী, ৩৭০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে দেশের ১৪০০ মাদ্রাসা। ১৭৫ একর আয়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য সাদ্দাম হোসেন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ হল নামে চারটি আবাসিক হল এবং ছাত্রীদের জন্য শেখ হাসিনা হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বেগম খালেদা জিয়া হল নামে তিনটি আবাসিক হল রয়েছে। বর্তমানে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার।

মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও এ দাবি অব্যাহত ছিল। প্রায় সোয়া ২০০ বছরব্যাপী বাংলার জনগণের এ দাবি উপেক্ষিত হয়। স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে দেশে ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বাতাবরণ তৈরিতে সহায়তা করেন। পরে দেশে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পঠন-পাঠনের জন্য এবং দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে এখানে রয়েছে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের অধীনে আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগ, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগ ও দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগ। এছাড়া আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিঙ্ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিতসহ ব্যবসা অনুষদের অধীনে আধুনিক বিভাগসমূহ। এছাড়া এখানে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর) নামে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। আরও আছে একটি কম্পিউটার সেন্টার। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে বর্তমানে দেশের প্রায় ১৪শত ফাজিল (ডিগ্রি) ও কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধারণ করেছে এক আধুনিক রূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, আবাসিক হলসহ টিএসসি চত্বরে দেওয়া হয়েছে দ্রুতগতির ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ। এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইসলামী শিক্ষা এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর