শিরোনাম
শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

অফুরন্ত আড্ডা

অফুরন্ত আড্ডা

আড্ডামুখর ডায়ানা চত্বর

রকমারি কথা আর অট্টহাসিতে ভরপুর সময় কাটানোর নামই আড্ডা। হালকা আলাপ-আলোচনা, কৌতুকছলে টিকা-টিপ্পনী, ছোড়াছুড়ি রসালাপে হট্টগোল, হাসি-ঠাট্টা, গাল-গপ্প, পাঁচমিশালি চুটকি ছড়া কিংবা গাজারে গল্পে আসর মাত করা বাংলাদেশের আবহমানতায় অলস অবসরে ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই আড্ডা সমানভাবে চলতেই পারে। তবে তরুণ-তরুণীদের আড্ডার প্রচলনটা একটু বেশি। প্রচলিত নিয়মানুযায়ীই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুটে ওঠে আড্ডার সচিত্র দৃশ্য। ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর মুক্ত সংস্কৃতিচর্চা আর আড্ডায় ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে কয়েকটি চত্বর। এ চত্বরগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে সবাই চেনে। এর মধ্যে দুয়েকটির নামকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেও বাকিগুলোর নামকরণ কিভাবে হলো তা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি।

ফ্রেন্ডশিপ চত্বর : কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরের ঠিক মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের পরই যে চত্বরটি চোখে পড়বে, এরই নাম ফ্রেন্ডশিপ চত্বর। কেউ কেউ একে 'নিরাপদ চত্বর' বলেও অভিহিত করেন। এ চত্বরের চারপাশেই পিচঢালা পথ, মাঝখানে সবুজ গাছ আর বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ আড্ডাপ্রিয়দের দারুণ জমিয়ে তোলে।

ডায়ানা চত্বর : ফ্রেন্ডশিপ চত্বরের পশ্চিম পাশেই যে চত্বরটি রয়েছে, তা ডায়ানা চত্বর নামে পরিচিত। প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার নামানুসারে এর নাম রাখা হয়েছে। সারিবদ্ধ বড় বড় গাছপালায় প্রতিবেদন ক্যাম্পাস টাইমে জমে ওঠে বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডা। বিশেষ করে ১২টার গাড়ি চলে যাওয়ার পর ২টার গাড়ির জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা গান-বাজনায় মেতে ওঠে এই চত্বরে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় এখানে।

সবুজ চত্বর : বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মাঝখানের বৃহৎ চত্বরটি সবুজ চত্বর নামে পরিচিত। ক্যাম্পাসের নবীন ছাত্রছাত্রীরা বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে এখানে আড্ডা দেন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও এ চত্বরকে ঘিরে তাদের নিজ নিজ দলীয় টেন্ট স্থাপন করেন। নানা প্রকারের ফুলগাছ আর ঝাউ গাছের অপরূপ দৃশ্য সংবলিত এই চত্বরটি আড্ডার এক উপযুক্ত স্থান।

ইংলিশ চত্বর : টিএসসিসি ভবনের উত্তরে লাগানো আমবাগানে একটি সাইনবোর্ড বলে দেয় এটি ইংলিশ চত্বর। একসময় ইংরেজি স্পিকিং চর্চাকারী ছাত্রছাত্রীদের আড্ডায় জমে উঠত এ চত্বর। প্রতিদিন বন্ধুরা মিলে ইংরেজি চর্চা করতেন।

বাদাম চত্বর : অনুষদ ভবনের দক্ষিণ পাশে সোয়া ফুট উঁচু বেদির ওপর ঝাউ গাছের সারি দিয়ে ঘেরা এ চত্বরে ক্যাম্পাস টাইমে জমে ওঠে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বাদাম কিনে বসে যান গল্পের আড্ডায়। হাসি আর গানে মেতে থাকেন কিছুক্ষণ।

লাভ চত্বর : ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আড্ডামুখর স্থান হলো এই লাভ চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোর সামনেই এ চত্বরটি পড়ন্ত বিকালে প্রেমিক-প্রেমিকাদের আড্ডায় জমে ওঠে। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকারাই নন, বন্ধুরাও তাদের বান্ধবীদের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেন এখানে। বর্তমানে এ চত্বরটি পিকনিক স্পট, বার্থডে সেলিব্রেট স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন : বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাশে বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে যে বাগান করা হয়েছে, তা শুরুর দিকে আড্ডাপ্রিয়দের দ্বারা প্রাণবন্ত হলেও বর্তমানে তা মুছে যেতে বসেছে। তবে পাশেই শেখ হাসিনা হল নির্মিত হওয়ায়, হলটি চালু হলে আবারও বোটানিক্যাল গার্ডেনটি তার প্রাণ ফিরে পাবে বলে সবার বিশ্বাস।

বকুলতলা : বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ক্যাম্পাসের পশ্চিমাঞ্চলে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং আইন ও শরিয়াহ অনুষদের সামনের রাস্তার দুই পাশে লাগানো বকুল সারিই এখন বকুলতলা নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বকুল গাছের নিচে বসার স্ট্যান্ড তৈরি করে দিয়েছে।

আয়াত আলী চত্বর : ক্যাম্পাসের উত্তরপাড়ায় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ডরমেটরির সামনেই এ চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট শাখার উপ-পরিচালক আয়াত আলীর নামে ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশাল আকার একটি কেক কেটে এর উদ্বোধন করা হয়। এ চত্বরে ক্যাম্পাসের আবাসিক শিক্ষকরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় আড্ডা দেন। সারা দিন শিক্ষাদান শেষে একটু ক্লান্তি দূর করতে প্রায় সব শিক্ষকই এসে হাজির হন এখানে। মেতে ওঠেন নানা গল্প-গুজব আর হাসি-তামাশায়।

ঝাল চত্বর : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবনের পূর্ব পাশে আম বাগানটিই ঝাল চত্বর নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঝালমুড়ি, আচার ও নানারকমের ফল বিক্রি করা হয়। ফলে এ চত্বরটিই ক্যাম্পাস সময়ে বেশ জমজমাট থাকে। শুধু শিক্ষার্থীই নন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রিয় স্থান এটি।

ল' চত্বর : মীর মশাররফ হোসেন ভবনের দক্ষিণ দিকের চত্বরটিই ল' চত্বর হিসেবে বেশ পরিচিত। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রিয় স্থান এটি। ক্যাম্পাস সময়ে এই ভবনের শিক্ষার্থীদের গ্রুপ স্টাডি ও আড্ডায় জমজমাট থাকে এ চত্বরটি।

 

সর্বশেষ খবর