বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ০০:০০ টা

\'শিক্ষা খাতটিকে পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে\'

\'শিক্ষা খাতটিকে পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে\'
শিক্ষা খাতটিকে পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিচ্ছে। সেই একজনকে রক্ষা করতে শত শত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে সরকার। লেলিয়ে দিচ্ছে পুলিশ আর নিজেদের ছাত্র সংগঠনকে। শিক্ষার বদলে ছাত্রদের সন্ত্রাসি বানানো হচ্ছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মরিচের গুঁড়া, তরল গ্যাস এসব নতুন অস্ত্র। শিক্ষা খাত ও শিক্ষকদের প্রতি সরকারের এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। গত সোমবার একুশে টেলিভিশনের 'একুশের রাত'-এ অর্থনীতিবিদ ও তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। অঞ্জন রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আমদানি করতে যাচ্ছে। আর শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে খরচ হবে মাত্র ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু, অস্ত্র আমদানিতেই সরকারের মনোযোগ বেশি বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষকরা তো এখানে মারামারি করতে আসেননি। সমস্যা থাকলে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে আজকের হরতাল প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কিছু লোক বাংলাদেশের নাগরিক হলেও বিদেশিদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। তারা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ছক অনুযায়ী দেশের গ্যাস, পানি, নদী-নালা, খনিজসম্পদ সব কিছু বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পরামর্শে বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সময় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়েনি। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে ভর্তুকি বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে যে খরচ হয়েছে তার ২০ ভাগের এক ভাগ টাকা দিয়ে বর্তমানের সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। তা না করে কিছু লোককে ব্যবসা দিতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে। দেশি-বিদেশি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে মানুষের ঘাড়ে এক একটা বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে হরতাল আহবান করা হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রণালের সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা সবকিছু এখন বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়। এ বছর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যেটা হয়েছে তা পরিকল্পনা কমিশন করেনি। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রাক্তন কর্মকর্তাদের দ্বারা তৈরি একটি প্রাইভেট ফার্ম দিয়ে করিয়েছে। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিতে গিয়ে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছাত্ররা শিক্ষক লাউঞ্জে গিয়ে শিক্ষকদের পেটাচ্ছে, ভিসি-প্রো ভিসিরা তাদের উপদেষ্টা হয়ে কাজ করছে। উচ্ছিষ্ট ছিটিয়ে ছাত্রদের ক্ষমতাসীনদের পাহারাদার বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের প্রতি এ সরকারের আচরণ অবাক করার মতো। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে সেখানে শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে এত আপত্তি! গণতান্ত্রিক একটা সমাজে শিক্ষকদেও ওপর নিপীড়নের জন্য নিত্যনতুন অস্ত্রের সংযোজন হচ্ছে! তিনি আলোচনার এক পর্যায়ে শেয়ারবাজারের প্রসঙ্গ এনে বলেন, কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতার আশপাশে থাকা অতি চালাক কিছু মানুষের হাতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর শেষ সঞ্চয় তুলে দেওয়া হলো। তদন্ত হলো, বিচার হলো না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর