শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

মফস্বলে অনীহা সরকারি কলেজ শিক্ষকদের

প্রায় দুই হাজার পদ শূন্য

সরকারি কলেজ শিক্ষকদের মফস্বলে থাকতে দিন দিন অনীহা বাড়ছে। ফলে শূন্যপদ পূরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক সংকট থেকেই যাচ্ছে। জেলা শহরের কলেজে বা উপজেলার কলেজে শিক্ষকদের পদায়ন হলেও নিয়মিত কলেজে যাচ্ছেন না। পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদায়ন না পাওয়ায় তেত্রিশতম বিসিএস-এর মাধ্যমে যোগদানকৃত অনেক শিক্ষক এরই মধ্যে বদলির তদবিরও শুরু করেছেন। ৭ আগস্ট তেত্রিশতম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় এক হাজারের মতো শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অধিকাংশই পদায়ন পেয়েছেন মফস্বলের কলেজে। বিভাগীয় শহরের কোনো নামকরা কলেজ অথবা মেট্রোপলিটন এলাকার কলেজে পদায়নের জন্য তদবির করেও অনেকে পদায়ন পাননি। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদায়নকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন না শিক্ষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গছে, শিক্ষকের শূন্যপদ পুরণে নতুন শিক্ষক দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত বেশ কিছু কলেজে পুরো বিভাগে একজনের বেশি শিক্ষক নেই। দেশের ২৭১টি সরকারি কলেজের ১৫ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রায় দুই হাজার পদ শূন্য রয়েছে।

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সরকারি কলেজ শাখা সূত্রে জানা গছে, রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোতে পদের চেয়ে দ্বিগুণসংখ্যক শিক্ষক ইনসিটু এবং সংযুক্তির মাধ্যমে রয়েছেন। পদোন্নতি নিয়ে মফস্বল ছেড়েছেন আরও এক হাজার ২০০ শিক্ষক। তারা রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের পছন্দের কলেজে অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছেন। তা ছাড়া রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজ, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ এবং সরকারি বাংলা কলেজে পদের চেয়ে চারগুণ বেশি শিক্ষক রয়েছেন।

সংযুক্তি ও ইনসিটু নিয়ে শিক্ষকরা যেসব কলেজে রয়েছেন ওইসব কলেজ তাদের মূল কর্মস্থল নয়। যেসব কলেজে তাদের মূল পদায়ন সেখান থেকেই তারা বেতন-ভাতা তোলেন। মূল পদায়নের কলেজ থেকে বেতন-ভাতা তোলায় ওইসব কলেজ কর্তৃপক্ষও নতুন শিক্ষকের চাহিদা দিতে পারছে না। আবার যেসব কলেজে সংযুক্তি ও ইনসিটু নিয়ে এসেছেন এসব কলেজে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক থাকায় তারা অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হন। তাই তাদের তেমন ক্লাস নেওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে মফস্বলে শিক্ষক সংকট তৈরি করে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরে বসেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন প্রায় এক হাজার ২০০ শিক্ষক। জানা যায়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ১৯টি শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৩৮ জন। ১৯ জনই আছেন সংযুক্তি ও ইনসিটু অবস্থায়। মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে শিক্ষকের পদ ১২০টি। সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক থাকার কথা ১১৩ জন। অথচ আছেন ১৫৮ জন। ৪৫ জন শিক্ষকই অতিরিক্ত। ঢাকা কলেজে শিক্ষকের পদ ১৯৭টি। তবে শূন্য দেখানো আছে ১৯টি পদ। শিক্ষক থাকার কথা ১৭৮ জন। অথচ রয়েছেন ২২৯ জন। ৫১ জন শিক্ষক অতিরিক্ত। সরকারি কবি নজরুল কলেজে শিক্ষকের পদ আছে ৮৪টি। আর শূন্য রয়েছে আটটি পদ। এখানে ৭৬ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন ১১২ জন। ৩৬ জনই আছে সংযুক্তি ও ইনসিটু অবস্থায়। ইডেন কলেজে শিক্ষকের পদ আছে ২১৭টি। ২২টি পদ শূন্য রয়েছে। এখানে ১৯৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন ৩০০ জন। ১০৫ জনই অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেত্রিশতম বিসিএস-এর ইংরেজি বিষয়ের একজন শিক্ষক জানান, তেত্রিশতম বিসিএস পরীক্ষায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে ফরেইন ক্যাডার দেওয়া হয়নি। তাই তিনি ৩৪তম বিসিএসের সব পরীক্ষা দিয়েছেন। এ জন্য তাকে অবশ্যই ঢাকা থাকতে হচ্ছে। তাকে একটি গ্রামের কলেজে পদায়ন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি নিয়মিত যান না।

আরও একাধিক শিক্ষক জানান, অধিকাংশ শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে ঢাকায় থাকতে চান নিজের সন্তানদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর জন্য। তা ছাড়া তাদের চেষ্টা থাকে ঢাকায় থেকে অন্য কিছু করা যায় কি না। সে জন্যই মূলত সংযুক্তি ও ইনসিটু বাড়ছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এহসানুল জব্বার বলেন, সংযুক্তি বা ইনসিটু আমরাও দিতে চাই না। কিন্তু এত উচ্চপর্যায় থেকে তদবির আসে যে না দিয়ে পারা যায় না। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী বা সমপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি যদি রাজধানীর একটি কলেজে কাউকে সংযুক্তি দিতে বলেন তখন আমাদের না দিয়ে উপায় থাকে না।

সর্বশেষ খবর