সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
দায়িত্ব নিয়ে মেয়রের আশাবাদ

দায়গ্রস্ত চসিককে রক্ষা করবেন প্রধানমন্ত্রী

দায়গ্রস্ত চসিককে রক্ষা করবেন প্রধানমন্ত্রী

দায়িত্ব নিয়েই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, চসিককে দায়গ্রস্ত দশা থেকে উদ্ধার করে উন্নয়ন ও সেবার পথে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণ সক্ষম করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পূর্ববর্তী সময়ের ২৯৫ কোটি টাকা দেনার ভার নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা চট্টলা মেয়রের দৃঢ়বিশ্বাস, ‘দায়িত্ব গ্রহণের আগেই প্রধানমন্ত্রী যেখানে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছেন, সেখানে চসিকের নতুন নতুন প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ এবং পুরনো প্রকল্প সম্পাদনে অর্থসংস্থানসহ যাবতীয় অগ্রগতিতে তিনিই শেষ ভরসা।’
দায়িত্ব নিয়ে নিজের দফতরে চেয়ারে বসেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে দেশবাসীর দোয়া এবং চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা চান চট্টগ্রামের তৃতীয় নির্বাচিত এই মেয়র। পৌরসভা হিসেবে ১৫২ বছর আগে যাত্রা শুরু করে চসিক। ১৯৮৯ সালে চসিকে রূপান্তরিত হওয়ার পর দুজন মনোনীত এবং তিনজন নির্বাচিত হন মেয়র হিসেবে। পূর্ববর্তী দুই নির্বাচিত মেয়র; যথাক্রমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি সমর্থিত মেয়র এম মনজুর আলমের সুপরামর্শ প্রত্যাশা করেছেন মেয়র নাছির। প্রসঙ্গক্রমে মেয়র নাছির বলেন, ‘প্রথাগত কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পর্ষদ নয়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে তদারকি কমিটি গঠন করা হবে। প্রতি তিন মাস পরপর তুলে ধরা হবে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা। আমি চাই, নগরবাসীই চালাক এই সিটি করপোরেশন।’
মুষলধারে বৃষ্টি আর কর্ণফুলীর জোয়ারভাটার দোলাচলে থাকা বন্দর নগরে গতকাল নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে চসিক সেজেছিল নতুন সাজে। আন্দরকিল্লার চসিক ভবনের সামনে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক-সামাজিক নেতা-কর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও হৃদয়ের উষ্ণতায় সিক্ত হন মেয়র। নগরভবনে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় কোরআন ও বোখারি শরিফ খতম। প্রায় সাড়ে ১০টায় নগরভবনে প্রবেশ করেন নতুন মেয়র। সঙ্গে ছিলেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলররাও। চসিক মিলনায়তনে দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর চসিকের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নতুন মেয়রকে। ফুলেল শুভেচ্ছায় নতুন মেয়র বিদায় জানান ইতিমধ্যেকার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্যানেল মেয়র আহমদ হোসেনকে। গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র নাছির পূর্ববর্তী পর্ষদ মেয়াদ শেষ না হওয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এতদিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেননি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন), ২০০৯-এর ৬ ধারা মোতাবেক করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারিত থাকায় ৬  মে শপথ নিলেও মেয়রসহ নির্বাচিত কাউন্সিলরদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রায় তিন মাস- ২৫ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। গতকাল বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত মেয়র থেকে দায়িত্ব নিয়েই নতুন মেয়র তার লিখিত বক্তব্যে পরম করুণাময়ের প্রতি শোকরানা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ এবং প্রধানমন্ত্রী ও নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠান মঞ্চে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর সহচর, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ইসহাক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। চসিক থেকে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় চসিক সচিব রশিদ আহমদ, প্রধান নির্বাহী কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম, ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন, মেয়রের একান্ত সচিব মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন নতুন মেয়র। অতঃপর নিজ কক্ষে যান। সই করেন কিছু ফাইলে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘চসিকের সমস্যাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। একটি অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমস্যা, অন্যটি সেবাসংক্রান্ত। ‘ভারপ্রাপ্তের ভার’ ও দেনায় ন্যুব্জ চসিককে উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান মেয়র।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বমানের বাসযোগ্য শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়তে ১৯৯৫ সালের ‘ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান’ কার্যকর এবং নগরীর ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান বিবেচনায় নতুন আঙ্গিকে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। প্রথমেই প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং জলজটমুক্ত চট্টগ্রাম গড়ার জরুরি কাজটি করতে চান মেয়র। তিনি আগামী বর্ষার আগেই জলজট মুক্তির আশাবাদও জানান। মেয়র বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান থাকবে ‘জিরো টলারেন্স’। চসিকে যোগ্য ব্যক্তিকেই যোগ্য ও উপযুক্ত পদে পদায়ন করে গতিশীলতা আনা হবে। চসিকের অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুর ও নাজুক দশায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেন মেয়র। তা সত্ত্বেও তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর জন্য আনন্দের বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সব প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। শপথ গ্রহণের পর এরই মধ্যে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ প্রাপ্তি, একনেক সভায় ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩২৬ কোটি টাকায় বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন এবং সম্প্রতি ১৯৯ কোটি টাকায় অ্যাসফল্ট প্লান্টের একটি প্রকল্প পিইসি সভায় অনুমোদনের বিষয়টি তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, চট্টগ্রামের যে কোনো ধরনের যৌক্তিক উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতেও আমাকে কখনো বিমুখ করবেন না।’ অনুষ্ঠানে সাবেক এম এন এ অশীতিপর নেতা ইসহাক মিয়া বলেন, ‘চসিকের করুণ দশা থেকে উদ্ধার করে নতুন মেয়র নাছির যাতে কার্যকর সেবা দিতে পারেন সে লক্ষ্যে সবার সহযোগিতাও প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর