বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লক্ষ্মীপুরের তিন পৌরসভায় সন্দেহ উদ্বেগ ও আতঙ্ক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ ও রামগতি পৌরসভায় সন্দেহ, উদ্বেগ ও আতঙ্ক যেন ততই বাড়ছে। নির্বাচনকে ঘিরে বহিরাগতদের আনাগোনা ও একাধিক প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া এবং ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হবে কিনা, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি পারবেন না— সে প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের অনেকের মুখে মুখে। আবার অনেকে মনে করেন, ভাবমূর্তি রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচনই উপহার দেবে সরকার। সব প্রার্থীকে নিয়ে পুলিশের মতবিনিময় সভার আয়োজন এমনটি আভাস দিলেও তা কতটা কার্যকর হয় তা-ই দেখার অপেক্ষায় সবাই। সরেজমিন রায়পুর পৌরসভা ঘুরে জানা যায়, এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন খোকন দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে লড়ছেন। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আলোচিত মেয়র আবু তাহেরের ভায়রা। তাই তাহের পরিবার তাকে জেতাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। সূত্র জানায়, সে জন্যই সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী বর্তমান মেয়র এ বি এম জিলানী। তিনি পৌর বিএনপির সভাপতি এবং ১২ বছর ধরে পদে রয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে আছেন চৌধুরী আবদুল ওয়াদুদ মৃধা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাকির হোসেন হাতপাখা প্রতীক এবং মাইনুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কম্পিউটার প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। মঙ্গলবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে রায়পুর থানা পুলিশ। সভায় পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কামাল হোসেন ও বেলায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে ঘিরে একটি বিশেষ মহল ও সন্ত্রাসী বাহিনীর আনাগোনা বেড়ে গেছে। বিগত নির্বাচনে এ দুটি ওয়ার্ডে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছিল। তাই সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন তারা। বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ বি এম জিলানী বলেন, বিশেষ একটি মহল হুমকি দিচ্ছে যে ২৭ তারিখের পর প্রার্থীদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। ৭-৮-৫ ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। একই দাবি জানান অন্য দলের মেয়র প্রার্থীরাও। এ সময় হানাহানিমুক্ত নির্বাচন দাবি করেন কেউ কেউ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, বিগত দিনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারা করেছেন তা সবার জানা আছে, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি আমরা কোনো সন্ত্রাস, কেন্দ্র দখল ও কোনো অপরাধে বিশ্বাসী নই। পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। কোনো রক্তপাত ঘটলে উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। একইভাবে রামগঞ্জ ও রামগতি পৌরসভায়ও ভোট নিয়ে আতঙ্কে আছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।

রামগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের পাটোয়ারী, বিএনপির রোমান হোসেন পাটোয়ারী, জাতীয় পার্টির হাজী মো. মহসীন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাকির দেওয়ানসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থীকে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রামগতিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মেজবাহ উদ্দিন মেজু, বিএনপির শাহেদ আলী পটু (বর্তমান মেয়র), জাতীয় পার্টির আজাদ উদ্দিন চৌধুরী (সাবেক মেয়র) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও আজাদ উদ্দিন চৌধুরী সম্প্রতি অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মামলায় কারাগারে থাকায় ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী ভোটার এই প্রতিবেদককে জানান, ভোট দিতে পারব কিনা সন্দেহ হচ্ছে। তবে কেউ কেউ এমন আশাও করছেন যে মাদক, সন্ত্রাস, ইভ টিজিং প্রতিরোধ, নারীর উন্নয়নসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে প্রশাসন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।

সর্বশেষ খবর