বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

হাসিনা-খালেদার ভোট দেখলাম

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

হাসিনা-খালেদার ভোট দেখলাম

‘বউত (বহু) দিন বাদে হাসিনা-খালেদার নৌকা-ধানর শীষর ভোট দেখলাম। গত খয়েখ (কয়েক) বছর ধরি কোনো ভোট দিছি না। ইবার (এবার) খালি (শুধু) হাসিনা-খালেদার ভোটর লাগি (জন্য) ভোট দিলাম।’ কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা আলেয়া বেগম। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে সরেজমিনে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার এমসি একাডেমি ভোট কেন্দ্রে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ পৌরসভার এমসি একাডেমি, রণকেলি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও সৈয়দ তানভীর হোসেন উচ্চবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের প্রায় সবার কণ্ঠেই ছিল ‘হাসিনা-খালেদার লড়াইয়ের’ বিষয়টি।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৩ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। মধ্যখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে ছিল না দলীয় প্রতীক। ফলে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর এবার পৌর নির্বাচনে মুখোমুখি হয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি তথা নৌকা-ধানের শীষ। দেশের রাজনীতির মাঠে প্রধানতম দুই দলের লড়াইয়ে ভিন্ন আবহ নিয়ে এসেছিল পৌর নির্বাচন। কয়েক বছর ধরে ‘ভোট উত্সব’-এর যে আমেজ, তা হারিয়ে যেতে বসেছিল। এবারের পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে সে আমেজ ফিরে এসেছে পুরো মাত্রায়। নির্বাচন বলতেই বাংলাদেশে যে ‘উত্সব’ বোঝায়, গতকাল সিলেটের তিন পৌরসভা গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে তা পুরোদমে বিরাজমান ছিল। দেশের অন্যান্য, এমনকি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের পৌরসভাগুলোয় যেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে সিলেটের তিন পৌরসভা ছিল শান্ত। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে, নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

সরেজমিনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী ভোটারের দীর্ঘ লাইন। পিছিয়ে ছিলেন না পুরুষরাও। কাজকর্ম ফেলে স্থানীয় মানুষদের ভোট উত্সবে শামিল হতে দেখা যায়। নারী ভোটাররা ভোট দিয়ে ঘরে ফিরে গেলেও পুরুষরা ভোট দিয়ে কেন্দ্রের আশপাশেই অবস্থান  করছিলেন। তাদের ছোট ছোট জটলার প্রধান আলোচনা ছিল ‘নৌকা-ধানের শীষের লড়াই’। রণকেলি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় আবদুর রহমান, রাহেল আহমদ ও জুয়েল আহমদের সঙ্গে। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তারা যা বলেন, তার সারমর্ম ছিল— ‘দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ-বিএনপি ভোটযুদ্ধে নামায় ভোটের পুরনো আবহ ফিরে এসেছে। নৌকা-ধানের শীষের লড়াই মানেই উত্সব। জমজমাট এ লড়াই পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কেড়েছে। এ জন্য উত্সাহ নিয়ে সবাই ভোট কেন্দ্রে এসেছেন।’

গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১২০ বছরের বৃদ্ধা রোকসানা আক্তার মেয়ে ফাহমিদা আক্তারের কোলে চড়ে ভোট কেন্দ্রে আসেন। এই বয়সেও কেন ভোট দিতে এলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রোকসানা বলেন, ‘হাসিনা আর খালেদার লড়াইওর (লড়াইয়ের) লাগি (জন্য) ঘরো (ঘরে) বইয়া (বসে) থাখতাম (থাকতে) পারছি না। এর লাগি ভোট দিতাম আইলাম।’ শুধু গোলাপগঞ্জ নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট পৌরসভায়ও ভোটারদের মধ্যে প্রধান আলোচনা ছিল ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই’।

সর্বশেষ খবর