শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুনির খাতায় নতুন মুখ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

খুনির খাতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। থানায় ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকলেও পুলিশের খাতায় এখন তারা ‘ভয়ঙ্কর’ খুনি। অপেশাদার অপরাধীরা খুনের মতো মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন চট্টগ্রাম প্রশাসন।

জানা যায়, গত ১ মার্চ কোতোয়ালি থানাধীন ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় খালুর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে স্ত্রী আসমা বেগম ও তার খালু মাকসুদুর রহমানকে খুন করে প্রবাসী রফিকুল ইসলাম হৃদয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারা উপজেলায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর ব্যাটের আঘাতে খুন হয় নুর মোহাম্মদ নামে এক তরুণ। ১৭ ফেব্রুয়ারি চাচাতো ভাইদের মারামারি থামাতে গিয়ে খুন হন বোরহান উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভাইয়ের হাতে খুন হন মো. ইদ্রিস ও তার ছেলে খালেদ হোসেন। গত ১৭ জানুয়ারি নগরীর ইপিজেড এলাকায় বন্ধুদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে খুন হন রিমন দেব নামে এক তরুণ। ১৫ জানুয়ারি নগরীর  ইপিজেড থানা এলাকায় মায়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে লাইটারেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন মো. মহসিনকে খুন করে আরিফুল ইসলাম নামে এক কিশোর। গত বছরের ১৩ অক্টোবর নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকায় টাকা না দেওয়ায় ছেলে জহিরুল হক সবুজ খুন করে বৃদ্ধ মা রওশন আরাকে। কলেজে না যাওয়ায় বকাবকির কারণে গত ১০ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন লাভলেইন এলাকায় ছোট ভাই রায়হান চৌধুরী ছুরিকাঘাত করে খুন করে বড় ভাই প্রকৌশলী সোহেল চৌধুরীকে। পারিবারিক কলহের জের ধরে ৫ অক্টোবর বন্দর থানাধীন হালিশহর এলাকায় সৎ মা বেবী আকতার ও সৎ ভাই ইমতিয়াজ যোগসাজশ করে খুন করে শিশু সামিকে।

২১ জুন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুলাভাই জানে আলমকে কুপিয়ে হত্যা করে শালা তৌহিদুল আলম।

পুলিশ বলছে পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, প্রতিশোধ পরায়ণতা, খেলায় বিরোধ, কিংবা কোনো তুচ্ছ ঘটনা অথবা সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ‘অপেশাদার অপরাধীরাও’ জড়িয়ে পড়ছে খুনের মতো জঘন্য অপরাধে। যার শিকার হচ্ছে নিকটজনরাই। তালিকাভুক্ত অপরাধী না হলেও তাদের হাতে ঘটছে একের পর এক খুন। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম জেলা এবং মহানগরীতে এ ধরনের দশের অধিক খুনের ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, ‘খুনির তালিকায় অপেশাদার অপরাধীরা যুক্ত হওয়া অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে তা প্রতিরোধ করতে সামাজিকভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে। সঙ্গে সমাজের ভিতর থেকেই সমাধান খুঁজতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধিই প্রতিরোধ করতে পারে এ ধরনের অপরাধ।’

অপেশাদার অপরাধীরা খুনের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত হওয়ার জন্য সমাজ পরিবর্তনকে দায়ি করেছেন সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা বৃদ্ধি, মানুষের মধ্যে ক্রোধ বৃদ্ধি এবং সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষ আগ্রাসী হয়ে উঠছে। তাই অপেশাদার অপরাধীরাও খুনের মতো ঘটনা সংঘটিত করছে।’

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাসে সংঘটিত খুনের বেশির ভাগ অভিযুক্তদের কারোরই অতীতে ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল না। খুনই ছিল তাদের প্রথম অপরাধ। মূলত পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, তুচ্ছ ঘটনা এবং সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর