প্রধানমন্ত্রী নিজে আইভী আপাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, এখন নৌকাকে জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব আপাকেই নিতে হবে। কিন্তু তার কথাবার্তায় মাঠের পানি ঘোলা হচ্ছে। আমরা যারা মাঠের কর্মী তারা আগেভাগেই মাঠ গোছাতে না পারলে নির্বাচন নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। কারণ মাঠে এবার বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা আছে। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে মাঠ জরিপ হলেও মেয়র প্রার্থীর জন্য কোনো নির্বাচনী নির্দেশনা নেই। তাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যস্ততা বাড়ছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। তবে এটা ঠিক আইভীর জনসমর্থন আছে ঘরে ঘরে। কিন্তু তার নিজস্ব কোনো কর্মী বাহিনী নেই। তাই দলের পক্ষে ভোটের বাক্সে ভোট জরো করার কোনো কার্যক্রম আমরা দেখছি না। দলের নেতা-কর্মীরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ জানে। তারা নৌকার জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে উন্মুখ। কিন্তু জেলা কমিটির পক্ষ থেকে মেয়র নির্বাচনী প্রচারণার কোনো মেসেজ থানা বা ২৭টি ওয়ার্ড কমিটির কাছে পৌঁছেনি। ঘরে ঘরে দ্রুত মেসেজটি পৌঁছানো দরকার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে সরেজমিন বন্দর থানার চারটি ওয়ার্ড ঘুরে আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় এ চিত্র। তবে একজন ছাড়া অধিকাংশই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। বিপরীত চিত্র বিএনপির। বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন দলের থানা ও নেতা-কর্মীদের ফোন করছেন। সবাইকে নির্বাচনী মাঠে নামার জন্য চেষ্টা তদবির করছেন। ফোন করছেন জনে জনে। বন্দর থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। প্রতীক পাওয়ার পর বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে। আশাকরি নির্বাচনী মাঠে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বন্দরের ২০, ২১ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে জানা যায়, এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ছিলেন বিএনপির সমর্থক। কিন্তু মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এই তিন ওয়ার্ডকে আলাদা করে দেখেননি। কাঁচা বা পাকা টিনের ঘর তার পাশ দিয়ে আঁকা-বাঁকা আরসিসি ঢালাই সড়ক। গ্রামীণ পরিবেশে নাগরিক সুখানুভূতি ছড়িয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে, এ জন্য তারা মেয়র হিসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন আইভীকে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আছেন আওয়ামী লীগের কমিশনার। সেখানেও উন্নয়নের একই চিত্র। কুড়িপাড়া, চাপাতলী, নাজিরপুর, হরিপুর একইভাবে উন্নয়ন হয়েছে। মুরাদপুর, ফুলহার ও লালরবাগে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। মেয়র পদে ভোটারদের ভাবনা প্রায় অভিন্ন। অনেকে ধানের শীষের বিজয়ের আশা করলেও বিজয়ের পর তিনি কাজ করতে পারবেন না এমন আশঙ্কাও মাঠে রয়েছে। বন্দর থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর দরকার। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শামীম ওসমানেরও দরকার। মেয়র হিসেবে তিনি সফলতা দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তাকে সফল দেখতে চায়। এ জন্য অবশ্যই তাকে দলের সবাইকে কনভিন্স করতে হবে। ‘শামীম ওসমান নির্বাচনে থাকলে ভালো না থাকলে আরও ভালো’—এভাবে একজন সাবেক মেয়রের কথা বলা ঠিক নয়। কারণ মাঠে আইভীর এত নেতা-কর্মী নেই, যারা সবদিক সামাল দিতে পারবে। কিন্তু যাকে নিয়ে কথাটি বলেছেন তার আছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দেওয়ার পরও দলীয় ঐক্যের মেসেজটা ঘরে ঘরে না পৌঁছানোটাও দুঃখজনক। জেলা কমিটির উচিত দ্রুত ঘরে ঘরে মেসেজটা পৌঁছে দেওয়া। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সমর্থকরা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুত।