শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাবিতে কাজ না করেই বেতন নিচ্ছেন কয়েক’শ কর্মচারী!

মর্তুজা নুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবিতে কাজ না করেই বেতন নিচ্ছেন কয়েক’শ কর্মচারী!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন শাখায় কাগজে-কলমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এক হাজার ২০২ জন। প্রতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয় দুই কোটিরও বেশি টাকা। এর মধ্যে কয়েকশ’ কর্মচারী কাজ না করেই প্রতি মাসে বেতন নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বেতনের পরিমাণও এত বেশি যা শুনলে অন্য চাকরিজীবীদের চোখ কপালে উঠবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণি পাস যোগ্যতায় চতুর্থ শ্রেণির এসব কর্মচারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নৈশপ্রহরী, ল্যাব অ্যাটেডেন্ট, মালি, সুইপার ও বাসের হেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক কর্মচারী কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে। চাকরির শুরুতেই চতুর্থ শ্রেণির এসব কর্মচারীর বেতন ১৮ হাজার ৮০০ টাকা। মাস শেষে এসব কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন পরিশোধ করা হয় মোট ২ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৮২০ টাকা। প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট (বর্ধিত) পায় বেতনের ৫ শতাংশ হারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি কর্মচারী কাজে ‘ফাঁকিবাজি’ করেন। সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অফিসিয়াল টাইম হলেও তারা কাজে থাকেন না। অনেকেই নিজে কাজে না এসে ‘প্রক্সি’ পদ্ধতিতে অন্য কাউকে কাজে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যারা ‘প্রক্সি’ দিচ্ছে তাদের দেওয়া হয় ২৫০-৩০০ টাকা। হল প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে এসব কর্মচারী এমন কাজ করার সাহস পান বলে অভিযোগ অন্য কর্মচারীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, কারা নিয়মিত কাজে আসেন না-সে বিষয়ে হল কর্তপক্ষ খোঁজখবর রাখেন না। অনেক সময় হল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে অবগত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেন না। এ কারণেই এসব কর্মচারী কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার যারা কাজে আসেন তারাও সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, নৈশ্যপ্রহরীরা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করছেন বলে জানা গেছে। তারা দায়িত্ব পালন না করে ঘুম ও নিজেদের মধ্যে আড্ডাবাজি-গল্পগুজবে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিটি আবাসিক হলে ৩-৪ জন নৈশ্যপ্রহরী থাকলেও ঘটে চলছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা। সেসব ঘটনা সম্পর্কে নৈশ্যপ্রহরীরা কোনো তথ্যই দিতে পারছেন না। গত ২০ অক্টোবর নবাব আবদুল লতিফ হলে লিপু হত্যাকাণ্ড, ১৩ এপ্রিল মধ্য রাতে রহমতুন্নেছা হলে প্রাচীর পার হয়ে অজ্ঞাত  যুবকের প্রবেশ ও সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য ওলট-পালট করে রাখার মতো ঘটনা নৈশ্যপ্রহরী থাকা সত্ত্বেও ঘটেছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, নৈশপ্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য এমন ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এরকম অভিযোগ অনেক দিন ধরেই শুনছি। তবে সংশ্লিষ্ট হল ও ভবন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সঠিক জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে।

রাবির নতুন উপাচার্য আবদুস সোবহান : সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৪৯ দিন পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো আগামী চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলেন রাবির ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (স.বি-১) আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আবদুল হামিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সোবহানকে আগামী চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজন মনে করলে চার বছরের আগেই এই নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।

অধ্যাপক সোবহান এর আগে ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাবি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

উপাচার্য হওয়ার আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছু দিন কারাগারেও ছিলেন তিনি। রাবির আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের’ আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক সোবহান। এ ছাড়া সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর