শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারতের সাত রাজ্য হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার

শিল্পায়ন হবে সিলেটে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সীমান্তবর্তী জেলা সিলেটের তিন দিকে ভারতের সাতটি রাজ্য। দুর্গম ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো শিল্পায়ন হয়নি ‘সেভেন সিস্টার’ নামে পরিচিত এই সাত রাজ্যে। ফলে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য এ সাতটি রাজ্যের মানুষ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। এ রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশি পণ্যের রয়েছে প্রচুর চাহিদা। কিন্তু শিল্পায়নে সিলেট অঞ্চল পিছিয়ে থাকায় ভারতের সাত রাজ্যের পণ্য চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এবার ভারতের এই সাতটি রাজ্যের বাজার পুরোপুরি দখলে নিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’-এর বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের আরও সম্প্রসারণ ঘটবে।

ভৌগোলিক কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল— এই সাত রাজ্যে শিল্পায়নের বিস্তৃতি ঘটেনি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে এই সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ব্যয় হয় ব্যবসায়ীদের। তাই ওই রাজ্যগুলোর ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেছে নেন বাংলাদেশকে। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সিলেট বিভাগের স্থলবন্দরগুলো দিয়েই তারা আমদানি করে থাকেন ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। তামাবিল স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সিলেটের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের এই সাতটি রাজ্যে পোশাক, সিমেন্ট, ইট, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও সিরামিক সামগ্রী, মাছ, ওষুধ সামগ্রী, বাইসাইকেল, ব্যাটারি, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, টাইলস, টয়লেট ফিটিংস, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেটজাত ফলের রস, মিনারেল ওয়াটার, রড, পাথর, পিভিসি পাইপসহ অন্তত ৫০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অবস্থিত শিল্পকারখানায় উৎপাদিত এসব পণ্য সিলেটের শুল্ক স্টেশন দিয়ে রপ্তানি করতে গিয়ে পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ে, তাই ‘সেভেন সিস্টার’-এর চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া সিলেটের সর্ববৃহৎ শুল্ক স্টেশন তামাবিলসহ কোনো স্টেশনে ওয়্যারহাউস না থাকায় অনেক সময় রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এতে রপ্তানিকারকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ভারতের পিছিয়ে থাকা সাত রাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের বাজারের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া সিলেটকে এগিয়ে নিতে এখানে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।এ ছাড়া সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে আইপি পার্ক। এ দুটি ছাড়াও সিলেটের ব্যবসায়ীরা প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তামাবিল শুল্ক স্টেশনের অনতিদূরে বেসরকারি উদ্যোগে আরও একটি ইকোনমিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তামাবিল শুল্ক স্টেশনে ওয়্যারহাউস নির্মাণের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবিটিও পূরণ হতে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমনি শিল্পক্ষেত্রে সিলেট এগিয়ে যাবে, অন্যদিকে ভারতের সাত রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের দখল পুরোপুরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকার বেশির ভাগ প্রবাসী সিলেটের।

 তাদের প্রচুর অলস টাকা সিলেটে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু এখানে শিল্পায়ন না হওয়ায় তারা সেটি পারছেন না। যদি সরকারি উদ্যোগে এখানে যে স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার কথা সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় তবে তারা বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। এতে ভারতের সেভেন সিস্টারের বাজারে আমাদের আধিপত্য আরও বাড়বে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানের শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য যাতে দ্রুত সময়ে পরিবহন করা যায় সে জন্য সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।’

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের একটি প্রতিনিধিদল ২৪ জুন ভারত সফর করে। এ সময় তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ড. মুকুল সাংমার সঙ্গে। ওই প্রতিনিধিদলের সদস্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এহতেশামুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক সম্পর্ক কীভাবে আরও জোরদার করা যায় বৈঠককালে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বিশেষ করে কয়লা ও পাথর ব্যবসা নিয়ে যে সমস্যা বিরাজ করছে তা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।’ এ ছাড়া ভারতের সেভেন সিস্টারে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে তামাবিল শুল্ক স্টেশনে দ্রুত ওয়্যার হাউস নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এহতেশাম।

ভারতের সাত রাজ্যের বাজার দখলে নিতে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ‘সেভেন সিস্টারে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চেম্বার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রবাসীদের সমন্বয়ে সিলেটে একটি ইকোনমিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ থেকে ২৭ অক্টোবর সিলেটে ‘প্রবাসী সপ্তাহ’ নামে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সিলেটে শিল্পায়ন ও ভারতের সেভেন সিস্টারে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরা হবে।

এদিকে, তামাবিল শুল্ক স্টেশনে ওয়্যারহাউস নির্মাণের ব্যবসায়ীদের যে দাবি তা শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তামাবিল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু জাফর মো. রায়হান। তিনি জানান, ওয়্যারহাউস নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ওয়্যারহাউস উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর