শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাকৃবিতে হচ্ছে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’। এখনই এর ভৌত কোনো অবকাঠামো শুরু না হলেও ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর অনুমতি দিয়েছেন। আর আসছে বাজেটেই এ ইনস্টিটিউটের সব রূপরেখা চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, শুধু বাকৃবিতেই নয়, কিশোরগঞ্জেও একটি বহিরাঙ্গন কেন্দ্র নির্মাণ করা    হবে। মাঠপর্যায়ের কাজ মূলত সেখানেই হবে। এ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে হাওরের কৃষি, মত্স্য, পশুসম্পদ, পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি, বন, পরিবেশ, মার্কেটিং, গ্রাম্য আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সেই সঙ্গে দেশে কৃষি গবেষণা, সমপ্রসারণ ও উদ্ধুদ্ধকরণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, হাওর ভূমিপুত্র প্রয়াত ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে হাওর এলাকা উন্নয়নে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে একটি প্রস্তাব দেন। মূলত তার এ প্রস্তাব থেকেই দেশে প্রথমবারের মতো হাওরাঞ্চল উন্নয়নের জন্য ইনস্টিটিউট হতে যাচ্ছে। তবে প্রয়াত এ কৃষিবিজ্ঞানী তৎকালীন সময়ে এর নাম দিয়েছিলেন ‘হাওর কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’। ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানে হাওরাঞ্চল সম্পর্কে জানা যায়, দেশের পূর্ব-উত্তারাংশে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৫৭টি উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত, যেখানে মোট ৩৭৩টি হাওর, প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি বিল, ৩৬ হাজারেরও বেশি পুকুর, ডোবা, নালা ও খাড়ি রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার বর্গ কিমি আয়তনের হাওর এলাকায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন লোক বসবাস করে। মোট চাষযোগ্য ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ৫.২৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হয়। হাওরে শস্য নিবিড়তা  ১৪৭%। জিডিপিতে হাওরের অবদান ০৩% এবং এর ২৫% আসে কৃষি থেকে। আগাম বন্যায় বছরে ক্ষতি ০.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর, যার আর্থিক মূল্য ৩.৪৮ মিলিয়ন টাকা। এ ক্ষতি জাতীয় কৃষির প্রায় ৩%। হাওরে ৩% লোক ভূমিহীন।

 কিন্তু ৮১% অকৃষিজীবীর কোনো কৃষিজমি নেই। সেসব এলাকায় বছরে কৃষিজমি কমছে ০.৩৩% হারে। হাওর এলাকায় ৩৪% পরিবার মার্জিনাল কৃষক, ৫% পরিবার জাতীয় লেভেলের নিচে, ৫১% পরিবার ক্ষুদ্র কৃষক এবং ২৮% লোক অতি দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে।

হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান সরকার বলেন, হাওরের গতিপ্রকৃতি, পরিবেশ ঠিক রেখে এবং ধ্বংস না করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই এ ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, হাওরের অমিত সম্ভাবনাময় কৃষি, মত্স্য, প্রাণিসম্পদ, জলজ বন, খামার যান্ত্রিকরণ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিভিন্ন সমস্যা গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সমপ্রসারণ ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করতে পারবে।

বাকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. আলী আকবর বলেন, এ ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদই জড়িত থাকবে। এ ছাড়া এখান থেকে দেওয়া হবে একাডেমিক ডিগ্রি, যেখানে অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি ডিগ্রিসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকছে।

সর্বশেষ খবর