আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে গত ছয় মাসে ৯০ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যানসহ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া নারী ও শিশুর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক ছিল বলে জানায় আসক। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় মাসে ২৮০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে ৬২৯ শিশু। গতকাল আসকের সিনিয়র উপপরিচালক রওশন জাহান পারভীন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় আসক। পরিসংখ্যান তুলে ধরে আসকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৯০ জনের মধ্যে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ৪৬ জন, ডিবি পুলিশের ক্রসফায়ারে আটজন, র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে একজন, পুলিশের নির্যাতনে চারজন, পুলিশের গুলিতে ১২ জন, র্যাবের গুলিতে একজন, র্যাব ও পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে একজন ও রহস্যজনকভাবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আসক বলেছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৪৪ জনকে আটক করেন। এর মধ্যে সাতজন ফেরত এসেছে, দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং তিনজনকে পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া এই ছয় মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছে ২৫ জন, যার মধ্যে কয়েদি আট এবং হাজতি ১৭ জন। আসকের পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়, গত ছয় মাসে ২৮০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৩ নারী। আর শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৪ নারী। যৌতুক দাবির ঘটনায় ১৪৩ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৮ জন। যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে ৬৮ জনকে, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৮ নারী। এর মধ্যে তিন নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক নারী ও চার পুরুষ খুন হয়েছেন। এ ছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৯৫ নারী-পুরুষ। শালিস ও ফতোয়ার শিকার হয়েছেন চার নারী। অ্যাসিড সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ নারী। গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২২ জন। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন, একজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং সাতজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
গত ছয় মাসে শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আসক বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের হত্যা এবং নির্যাতনের সংখ্যা ছিল আশঙ্কাজনক। গত ছয় মাসে ৬২৯ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৩২ শিশু খুন হয়েছে, ৩৭ জন আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছে। আর নিখোঁজের পর ১৮ জন এবং বিভিন্ন সময় আরও ৪৪ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।