শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘরে ঘরে অবৈধ গ্যাস, চলছে কারখানাও

লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য

মাহবুব মমতাজী

ঘরে ঘরে অবৈধ গ্যাস, চলছে কারখানাও

আবাসিক বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ প্রায় তিন বছর। কিন্তু তাতে কী? অবৈধভাবে নেওয়া গ্যাসে ঘরে ঘরে চলছে রান্না। কোথাও কোথাও আবাসিকের নামে গ্যাস সংযোগ নিয়ে চালানো হচ্ছে ফুচকা বা নুডলসের কারখানা। এতে করে সরকার টাকা না পেলেও পকেট ভরছে একশ্রেণির অবৈধ কর্মকর্তার। গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সরেজমিনে জানা যায়, যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগে অবৈধ গ্যাস সংযোগে ফুচকার কারখানা চালান কালাম। ইঞ্জিনিয়ার গলির কাওসার মিয়ার বাড়ির সঙ্গে মসজিদের উল্টো দিকে গলির মাথায় কাসেমের বাড়িতে কারখানাটি। সেখানে আছে পাঁচটি ডাবল চুলা। এ ছাড়া কাজীবাড়ি গলির ২১৭/১ লতিফ মিয়ার বাড়িতে আছে আলতাফের ফুচকা কারখানা। ১৭৭ নম্বর মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের বর্ষা ডেন্টাল ক্লিনিকের উল্টা দিকের গলির মাথায় রয়েছে ফারুকের ফুচকা কারখানা। জুরাইন কমিশনার রোডে মহিলার বাড়ি নামে পরিচিত বাসাতেও চলে অবৈধ গ্যাসে ফুচকা বানানোর কাজ।  শুধু তাই নয়, অনেক বাসায়ও অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে গ্যাসের লোকজন জড়িত থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এলাবাসী নিজ উদ্যোগেই এ অবৈধ কাজে জড়াচ্ছেন। এতে করে গ্যাস অপচয়ের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনাও।  জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর বালুর মাঠ লাল মসজিদ এলাকার একটি ভবনের নিচতলার একটি বাসায় অগ্নিকাণ্ডে তিন শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হন। শ্বাসনালিসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় একে একে তাদের চারজন মারা যান। তদন্তে বের হয় সেই বাড়ির লোকজন নিজেরা গ্যাসের লাইন চুরি করে চুলা জ্বালিয়েছিল। সংযোগে ত্রুটিজনিত লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়ে অগ্নিকাণ্ড হয়। তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক কার্যালয় দাবি করেছে, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলছে। গত তিন বছরে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্য খাতের অবৈধ প্রায় ৮২০ কিলোমিটার পাইপলাইন উচ্ছেদ করেছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ম্যানেজার জানান, অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা অনেক প্রভাবশালী। তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগের অনেক তথ্য জানলেও নিরাপত্তার অভাবে অভিযান চালাতে পারেন না। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে তারা মিরহাজীরবাগ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধার মুখে ফিরে আসতে হয়। তিনি জানান, অসাধু ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে মেকানিক এনে গ্যাসের সংযোগ লাগায়। এ ধরনের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে কিংবা আবাসিকের নামে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য জরিমানা করতে আমাদের অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। আবার অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও মৌখিক নিষেধাজ্ঞা থাকে। গতবছর ওয়ারীতে একজন এমপি অবৈধ সংযোগওয়ালা একটি বাড়ির উদ্বোধন করেন। সেটি বিচ্ছিন্ন করতে তিতাস গ্যাসকে ২১টি টিম করতে হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর