বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবন হচ্ছে আট মেডিকেলে

প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা

জিন্নাতুন নূর

নিউক্লিয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করে মানুষকে বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য দেশের আটটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নিউক্লিয়ার মেডিসিন সংশ্লিষ্ট ভবন। এর মাধ্যমে সাধারণ রোগীরা পারমাণবিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সেবা নিতে পারবেন। মূলত সাধারণ মানুষকে কম খরচে প্রাণঘাতী রোগের জন্য পারমাণবিক চিকিৎসার মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা-সুবিধা প্রদানের জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক চিকিৎসার মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা শুধু সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই নয়, এ খাতের গবেষকদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র বৃদ্ধিতেও এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যে আটটি হাসপাতালে এ সেবা প্রদান করা হবে সেখানে ক্যান্সার, থাইরয়েড, মস্তিষ্ক, অস্থি, হার্ট, স্তন, যকৃৎ, কিডনিসহ প্রাণঘাতী রোগের শনাক্তকরণসহ চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একনেক নির্বাহী কমিটি ৫৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোয় এ-সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে সরকার পরবর্তীতে দেশের অন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও নিউক্লিয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পরিকল্পনা করছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই আটটি হাসপাতালে নতুন ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি হাসপাতালে তৈরি হবে নিজস্ব ছয় তলা ভবন। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানে দেশি-বিদেশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ জনবলও নিয়োগ করা হবে। এই আটটি কেন্দ্রে স্পেক্ট-সিটি, বিএমডি, কালার ডপলার মেশিন, অটোমেটিক গামা কাউন্টার, থাইরয়েড ক্যামেরা, থাইরয়েড আপটেক সিস্টেমসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসানো হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেইন বলেন, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাসেবা যাতে সহজেই নিতে পারেন সেজন্যই এ উদ্যোগ। সাধারণ মানুষ এর ফলে প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা ও এসব রোগের শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। যে আটটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রথমে এই সুবিধা দেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে— আগারগাঁওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, যশোর মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পরবর্তীতে নোয়াখালী, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর ও পটুয়াখালীতে এই চিকিৎসাসেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিউক্লিয়ার টেকনোলজির মাধ্যমে বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস গড়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে এখন মোট ১৪৪টি রোগের পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজে এ-সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হয়। এই আটটি হাসপাতালে করা হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২২-এ। ভবিষ্যতে দেশের ৬৪ উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয়ও এই চিকিৎসা প্রদানের পরিকল্পনা আছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেসের পরিচালক ডা. নুরুন নাহার জানান, প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় উন্নত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাইরে থেকে রোগীদের আর রাজধানীতে কষ্ট করে আসতে হবে না। এতে মানুষের অর্থ ও সময় উভয়ই বাঁচবে।

 

সর্বশেষ খবর