বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রায়ের অপেক্ষায় পাঁচ আসামি

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধ

আহমেদ আল আমীন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শামসুল হোসেন তরফদারসহ মৌলভীবাজারের পাঁচ আসামির বিচার শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। যে কোনো দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। শুনানিতে বাদীপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযুক্তদের খালাস চেয়েছেন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— শামসুল, মোবারক মিয়া, নেসার আলী, ইউনুস আহমেদ ও উজের আহমেদ চৌধুরী। এদের মধ্যে ইউনুস ও উজের গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। অন্য তিন আসামি পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চারজনকে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতন এবং বাড়িঘরে লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ। এ মামলার প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হবে। প্রসিকিউটর আবুল কালাম বলেন, এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি। আশা করি ট্রাইব্যুনালে তাদের শাস্তি নিশ্চিত হবে। প্রসিকিউশনের পাঁচটি অভিযোগ হলো ১. ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজনগরের দানুমিয়াকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এই অভিযোগে আসামি হলেন শামসুল, মোবারক,  নেসার, ইউনুস ও উজের। ২. জামিনী মোহন দেবকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এই অভিযোগে নেসার ও ইউনুস আসামি। ৩. উত্তরবাগ গ্রামে রসরাজ ভট্টাচার্যসহ আরও কয়েকজনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন। এই অভিযোগে নেসার, ইউনুস ও উজের আসামি। ৪. নজাবত আলী ও আবদুল বাসেতকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা। এই অভিযোগে পাঁচজনই আসামি। ৫. খোলাগ্রামে আক্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হিন্দু পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা। সেখানে শশাঙ্ক ঘোষ ও সূর্যকুমারের নতুন এবং পুরাতন বাড়িতে আক্রমণ করে একটি সম্প্রদায়কে নির্মূলের উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড। এতে সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রসিকিউশনের দাবি। এই অভিযোগে পাঁচজনই আসামি। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মামলায় বিচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগে ওই বছরের ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর এ মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শেষে প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওই দিনই মৌলভীবাজারের রাজনগরের গয়াসপুর গ্রাম থেকে উজের ও শহরের চৌমোহনা থেকে ইউনুসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের মধ্যে শামসুল  হোসেন তরফদার একাত্তরে আলবদর বাহিনীর এবং নেসার আলী রাজাকার বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার ছিলেন। বাকি তিনজন রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

 এর আগে গত ২২ নভেম্বর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

সর্বশেষ খবর