সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের চাকরি যাবে

সংসদে তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের চাকরি যাবে

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বার বার কঠোর   পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কিছু সংখ্যক শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরাসরি জড়িত। এ জন্য এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার  চাকরি থাকবে না। এমনকি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থাকবে না এবং ওই স্কুলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে।

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে গতকাল প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি সাম্প্রতিক প্রশ্নপত্র ফাঁসকে প্রযুক্তির উন্নয়নের সমস্যা হিসেবে অবহিত করে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কারণে কিছু শিক্ষক মোবাইল ফোন বা অন্যান্য কিছু ব্যবহার করে আগে প্রশ্নপত্র খুলে এটা প্রচার করে দেয়। এতে অর্থ রোজগারও করে, সরকারকে বেকাদায় ফেলতে চান। কিছুসংখ্যক শিক্ষক যারা আমাদের সম্মান নষ্ট করছে, সার্বিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমরা একটা ব্যবস্থা নিলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এবার কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে আশা করি বন্ধ হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এবার আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছি। কোনোভাবে যদি কাউকে জড়িত পাওয়া যায় তার কঠোর শাস্তি হবে, শিক্ষকের চাকরি থাকবে না। এ ছাড়া কোনো ধরনের মোবাইল ফোন কেউ হলের আশপাশে নিতে পারবে না। এটা আগেই সিদ্ধান্ত ছিল, এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে গিয়ে সিটে বসতে হবে তার পর খাম খোলা হবে। এটা পর্যবেক্ষণের জন্য মোবাইল টিম করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এখন বিজিপ্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সম্ভাবনা নেই বা হয়ও না। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৩১ লাখ : দিদারুল আলমের (চট্টগ্রাম-৪) এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে মোট ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় : এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,  প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

২১ হাজার প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নেই : প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সংসদে বলেছেন, আমাদের দেশের ২১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। অর্থাৎ এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য     রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পিএসসির মতামত  লাগবে। শিগগিরই এসব স্কুলে সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে সে পদ পূরণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ার কারণে এটা এখন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।

 ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ শিগগিরই : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যালয়হীন গ্রামে ১৫০০ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে মামলার কারণে সেসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক নিয়ে এসব স্কুল চালানো হচ্ছে। অচিরেই প্রতিটি স্কুলে চারজন করে অর্থাৎ ১৫০০ স্কুলে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারব। এরই মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।  মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) এর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব স্কুলের ক্লাস রুমের সংকট রয়েছে, নিড ভেইজড প্রকল্পের আওতায় চাহিদার ভিত্তিতে তা পূরণ করা হবে। এজন্য ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ হাজার ক্লাসরুম করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  আরও এক হাজার স্কুল করার চাহিদা : সামসুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়হীন গ্রাম আর এখন নেই। মাত্র চারটি বাকি আছে। তবে চর ও হাওর অঞ্চলে কিছু গ্রামে বিদ্যালয় নেই। এজন্য নতুন করে আরও এক হাজার স্কুল করার চাহিদা দিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় চর ও হাওর অঞ্চলে বিদ্যালয় করা হবে।  বাজারে ভয়ঙ্কর ক্লোরোফর্ম- ব্যবস্থা নিন : কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে বাজারে অবাধে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক পদার্থ ক্লোরোফর্ম বিক্রি হচ্ছে বলে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বেগম রওশন আরা মান্নান। তিনি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এসবের কোনো মনিটরিং নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকাল ৭১ বিধিতে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিসের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বেগম রওশন আরা মান্নান বলেন, ক্লোরোফর্ম একটি ভয়ঙ্কর রাসায়নিক পদার্থ। এটা কোনো রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য অথবা বিভিন্ন গাছ-গাছড়ার নির্যাস বের করতে এই ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ক্লোরোফর্ম বিক্রিতে কোনো মনিটরিং বিধি-নিষেধ নেই। যে কারণে খোলাবাজারে যে কেউ এই রাসায়নিক পদার্থ যথেচ্ছভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারে। এই সুযোগটি নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী এবং অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। যার অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এটি যে কারও নাকে ধরা হলে অজ্ঞান হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। তারপর সর্বস্ব লুট করে তাকে মেরে ফেলা হয়। নোটিসে তিনি বলেন, এভাবে অনেক লোকের মৃত্যু হয়েছে, যার হিসাব সব সময় পাওয়া যায় না। খবরের কাগজেও সব সময় এ ধরনের খবর পাওয়া যায় না। এই ক্লোরোফর্ম নাক দিয়ে বেশি পরিমাণ গেলে মানুষের আর জ্ঞান ফিরে আসে না এবং মানুষ মারা যায়। নোটিসে তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে সরকারকে এ বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করে ডাক্তার বা ল্যাবরেটরির মাধ্যমে বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এর বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। মিথ্যা ছাড়পত্র নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে আমদানি করতে না পারে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

নোটিসের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিষয়টিকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটা আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযের অধীনে নয়। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন। তারপরও এটা জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর দায় আমাদেরও রয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আমরা ক্লোরোফর্ম আমদানি, বিপণন ও বিতরণে কঠোর মনিটরিং করতে অনুরোধ জানাতে পারি। পাশাপাশি সিভিল সার্জনকে দিয়ে স্থানীয়ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনিটরিং করতে পারে। মন্ত্রী জানান, ক্লোরোফর্ম অবৈধভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এগুলো নিয়ন্ত্রণ হওয়া প্রয়োজন। পরে ডেপুটি স্পিকার সংশ্লিষ্ট এমপি বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ের ওপর আরেকবার নোটিস দেওয়ার পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ খবর