মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জরুরি চিকিৎসা উপকরণ নেই সংকটে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জরুরি চিকিৎসা উপকরণ নেই সংকটে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংকট চরমে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসাও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। ফলে গরিব ও অসহায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে অন্তহীন ভোগান্তিতে। ক্ষেত্র বিশেষে অসহায় রোগীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু মুখে পড়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের সব বিভাগে প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংকট দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের অভাবে গরিব-অসহায় রোগীরাই বেশি কষ্টে পড়েন। কারণ তাদের তো বেসরকারি হাসপাতাল বা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে আমরা এ ব্যাপারে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। দেখি আস্তে আস্তে এসব উপকরণ সরবরাহ করা হবে হয়তো।’ জানা গেছে, সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে ‘২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চমেক হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতির চাহিদা প্রেরণ’ শীর্ষক একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয় ‘রোগীদের উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাহিদা মোতাবেক শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক ও যুগোপযোগী করার নিমিত্তে যন্ত্রপাতিগুলো সংগ্রহ ও সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন।’ তাছাড়া ওই চিঠিতে হাসপাতালের পরিচালক বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং বিভাগের জন্য ৫৩ প্রকারের ১২৭টি চিকিৎসা উপকরণও চেয়েছেন। চমেক হাসপাতালের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা উপকরণের মধ্যে আছে, সিটি স্ক্যান মেশিন একটি, ভ্যান্টিলেটর মেশিন ১০টি (আইসিইউ বিভাগ), কার্ডিয়াক মনিটর ১০টি (সিসিইউ বিভাগ), এনজিওগ্রাম মেশিন একটি, এনেসথেটিক মেশিন ১০টি (অপারেশন থিয়েটারের জন্য) অটোমেটিক ইএসআর এনাইজার (মিনিমাস ৪০ স্যাম্পল), ইলেকট্রোলাইট অ্যানাইজার একটি, কমপ্লিট অটোমেটিক বায়োকেমিস্ট্রি (মিনিমাম ২০০ স্যাম্পল), কমপিউটেড রেডিওথেরাপি দুটি, এক্স-রে মেশিন (রেডিওলজি), ফোর ডি কালার ডাপলার আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন তিনটি (রেডিওলজি, সিসিইউ, শিশু বিভাগ), ওপিজি মেশিন (রেডিওলজি), অপারেটিভ মাইক্রোসকোপ (নাক, কান, গলা এবং বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি), হাউড্রোলিক অপারেশন টেবিল ১০টিসহ প্রায় ১২৭টি উপকরণ। এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে অভিযোগ আছে, এমআরআই মেশিনসহ বিভিন্ন অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণের স্বল্পতা ও নষ্ট থাকাকে পুঁজি করে হাসপাতালেরই এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী রোগীদের প্রাইভেট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।

এর মাধ্যমে ওই কর্মচারী নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় থেকে একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। ফলে কখনো এমআরআই মেশিনসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকরণ ভালো থাকলেও তা নষ্ট দেখানো হয়। রোগীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।

হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ব্যয় নামমাত্র। প্রাইভেট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে এসবের মূল্য কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু হাসপাতালের মেশিন সংকট, মেশিন না থাকা, নষ্ট থাকা, অপারেটর না থাকাসহ নানা কারণে রোগীরা হাসপাতালের কমমূল্যের রোগ নির্ণয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে ব্যয়বহুল রোগ নির্ণয়গুলো নিয়ে অধিকাংশ সময় গরিব রোগীরা বিপাকে পড়েন। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ব্যয় ব্রেইন/নেক (মস্তিষ্ক/গলা) এর সিটি স্ক্যান দুই হাজার টাকা, বুকের (চেস্ট) সিটি স্ক্যান দুই হাজার ৫০০ টাকা, সমগ্র উদর (অ্যাবডোমেন) চার হাজার টাকা, উদর (আংশিক) দুই হাজার টাকা। কিন্তু প্রাইভেট খাতে এসব রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগীকে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া বর্তমান সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ এমআরই স্ক্যানও হাসপাতালে অতি সুলভে করা সম্ভব হয়। যা বেসরকারি খাতে প্রায় তিনগুণ বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে এমআরআই স্ক্যান এর মধ্যে ব্রেইন টেস্ট তিন হাজার টাকা, ব্রেইন (কনট্রাস্টসহ) চার হাজার টাকা, লাম্বার/সারভাইকাল/ ডর্সাল স্পাইন টেস্ট (কনট্রাস্ট ছাড়া) তিন হাজার টাকা এবং লাম্বার/সারভাইকাল/ডর্সাল স্পাইন টেস্ট (কনট্রাস্টসহ) চার হাজার টাকা । কিন্তু এসব টেস্ট প্রাইভেট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রসমূহে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা নেওয়া হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর