রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে

রাজধানীতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী

মোস্তফা কাজল

রাজধানীতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী

‘একাত্তরে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করা ৪৬৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণে নির্মাণ করা হবে আধুনিক বহুতল ফ্ল্যাট ভবন। এ লক্ষ্যে সরকার হাতে নিয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ ও প্রকল্প। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে এবার অসহায় ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা পল্লী’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকার জমির ওপর নির্মিত হবে এই পল্লী। এ জন্য নেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রকল্পের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি শেষ হয়েছে। ডিপিপি পর্যালোচনার জন্য বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

জানা যায়, মিরপুরে চিড়িয়াখানার কাছে এই মুক্তিযোদ্ধা পল্লী নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রকল্পের আওতায় একটি বেজমেন্টসহ ২৩ তলাবিশিষ্ট ১৪টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাট  হবে ১ হাজার ৩৩৮ বর্গফুটের। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯ সালের জুনে মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। জানা গেছে, চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন এবং আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য সরকার বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে অসহায় ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা পল্লী’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। মিরপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকার জমির ওপর নির্মিত হবে এই পল্লী। বর্তমানে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের আর অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। ভবিষ্যতে তাদের কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করতে পারবে না। মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে সরকার আরও যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে এর মধ্যে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ। শহীদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে জাদুঘর নির্মাণ। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ জাগ্রতকরণ। দেশের সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ ইত্যাদি। ১৯৯৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মিত হাসপাতালটি ইজারা দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী উম্মাহ মেডিকেল কলেজ’ নাম দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা শুরু করে। ২০০ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তিও করে তারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের নির্মিত এই হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধারাই চিকিত্সা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করেন, বরং এটিকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনের মুখে সরকার ইজারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। ইসলামী উম্মাহ করপোরেশনের সদস্যরা হাসপাতালের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তবে ১৯৯৭ সালের মার্চে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতালটি বুঝিয়ে না দিয়েই ইসলামী উম্মাহ করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে যান। যাওয়ার সময় হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতি আর আসবাব নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরকার এখনো তাদের কাছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ভাড়া পায়। এরপর হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয় তত্কালীন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণ বিভাগ। এখন হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দুই বছর আগে এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা জমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন করে একটি আবাসিক ভবন ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

 মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখানে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

সর্বশেষ খবর