রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
শামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি

মর্তুজা নুর, রাবি

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জনপ্রিয় শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে। দেশের প্রথম এই শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার আত্মোৎসর্গের দিনকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই স্বীকৃতি আজও মেলেনি। জানা যায়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উত্তাল হয়ে ওঠে রাবি। ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হলে উপাচার্যের (ভিসি) সঙ্গে জরুরি বৈঠক ফেলে ছুটে যান ড. জোহা। ছাত্রদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনেন। তাতেই বিপত্তি ঘটে। প্রশাসন মনে করে, যে ব্যক্তি এক ডাকে ফেরাতে পারে ছাত্রদের, সেই হয়তো তাদের রাস্তায় নামিয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সেদিন তার কথা কাটাকাটিও হয়। সেই মিছিলে আহত ছাত্রদের তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই রাত ১০টায় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভায় ড. জোহা বলেন, ‘শুধু ছাত্ররা নয়, আমরা সবাই মিলে এই দানবীয় শক্তিকে রুখে দাঁড়াব, মরতে যদি হয় সবাই মরব।’ পরেরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে রাবি প্রধান ফটকের কাছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ। এ সময় সেনারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে উদ্যত হলে প্রক্টর ড. জোহা বলেন, ‘প্লিজ ডোন্ট ফায়ার, আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে এখান থেকে।’ অনুরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট বলেন, ‘ফায়ার অ্যান্ড কিল দেম’। গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। তখন তার ওপরই গুলি চালায় সেনারা। তখন আহত হন আরও দুজন শিক্ষক ড. মোল্লা ও মুহম্মদ আবদুল খালেক। এক বছর পর বের হওয়া স্মরণিকায় মুহম্মদ আবদুল খালেক লেখেন, ‘ড. মোল্লা ও আমার অবস্থা জানতেই তিনি যখন ছুটে আসছিলেন সেই মুহূর্তে তাকে বেয়নেট চার্জ করা হয়। রক্তে তার জামা ভিজে গেছে, জওয়ানদের হাতে আমি বন্দী। জওয়ানরা আমাকে মিলিটারি ভ্যানে তুলে ফেলল। আমি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিৎকার করে বললাম ড. জোহা মারা যাচ্ছেন, তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’ দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার আত্মোৎসর্গের দিনকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়েছে আসছে রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই স্বীকৃতি আজও মেলেনি। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতিরি সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক দিন এই জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের অনুরোধ করে আসছি। সরকারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারা আমাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু কেন ড. জোহার রক্তের স্বীকৃতি মিলছে না সেটা বোধগম্য নয়। তারপরও আমরা সরকারের কাছে দিবসটি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর