শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

হালদায় ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড ডিম সংগ্রহ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

অবশেষে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র ‘রুপালি সম্পদের’ খনি বলে খ্যাত হালদা নদীর জেলেদের। বৃহস্পতিবার রাতে গত ১০ বছরের মধ্যে কার্প জাতীয় মাছের রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছাড়ার পর হালদা পাড়ের জেলেদের মধ্যে চলছে ‘ডিম উৎসব’। হালদার দীর্ঘ ‘ডিম খরা’ কাটিয়ে পুরনো রূপে ফেরাকে প্রশাসনের উদ্যোগ এবং স্থানীয়দের সচেতনতার ফসল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করেছে জেলেরা। এবার আনুমানিক ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। যা থেকে ৩৭৮ কেজির মতো রেণু তৈরি হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও স্থানীয়দের সচেতনতার জন্যই স্বরূপে ফিরেছে হালদা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এবার হালদার বিষয় নিয়মিত তদারক করায় প্রশাসন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর ছিল। প্রশাসন সক্রিয় থাকায় মা মাছ যেমন নিধন হয়নি, তেমনি ড্রেজার ও বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। মা মাছের জন্য ক্ষতিকারক কোনো কর্মকাণ্ড হয়নি হালদায়। ফলে ডিম ছাড়ার অনুকূল সব পরিবেশ পেয়েছে মা মাছ। তাই এবার রেকর্ড ডিম ছেড়েছে মা মাছ।’ চট্টগ্রাম জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক জানান, ‘এবার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহ করা হয়। ডিমগুলো প্রক্রিয়া করে রেণুতে পরিণত করতে জেলেদের সার্বিক সহযোগিতা করছে মত্স্য অফিস। এরই মধ্যে হালদা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ হালদার ডিম সংগ্রহকারী গড়দুয়ারা এলাকার মো. কামাল সওদাগর বলেন, ‘এবার ছয়টি নৌকা দিয়ে ৩৫ বালতির মতো ডিম সংগ্রহ করেছি। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহ করি।’

সরকারি হিসাব মতে, হালদা থেকে সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ ছিল ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭২০ কেজি। এর আগে ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি এবং ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয় হালদা থেকে।

জানা যায়, হালদা থেকে সংগ্রহ করা মাছের ডিমগুলো সনাতন পদ্ধতি এবং সরকারি বিভিন্ন হ্যাচারিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রেণুকে পরিণত করা হবে। রেণুতে রূপান্তরিত করার পর তা স্থানীয়ভাবে তৈরি করা কূপে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে তা রেণুতে পরিণত হয়। কয়েকদিন পরে তা মাছ পোনা হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছ বিক্রি করা হয়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে মা মাছ ‘নমুনা ডিম’ ছাড়ার পর হালদা পাড়ে অপেক্ষা করতে থাকে জেলেরা। রাত দেড়টায় বজ সহ ভারি বর্ষণ শুরু হলে কার্প (কাতল, রুই, মৃগেল এবং কালিবাউশ) জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে। রাত আড়াইটা থেকে ডিম সংগ্রহ শুরু করে জেলেরা। হালদার আংকুরি ঘোনা, আজিমেরঘাট, গড়দুয়ারা, মার্দাশা, খলিফা ঘোনা, নাপিতের ঘোনা, রামদাশ মুন্সিরহাট, বাড়ি ঘোনা এলাকা থেকে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়। এবার ৪০৫টি নৌকা দিয়ে এক হাজারের অধিক জেলে ডিম সংগ্রহ করে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর