রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসের নামে প্রতারণার ফাঁদ

হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা

মর্তুজা নুর, রাজশাহী

চলমান উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁসের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে কয়েকটি চক্র। পরীক্ষার্থী ও স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আর ভুয়া প্রশ্ন সরবরাহকারীকে চিনতে পারছে না পরীক্ষার্থীরা। তবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সাইধাড়া গ্রাম থেকে প্রথমে রবিউল ইসলাম ওরফে জনি নামের একজন ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর র‌্যাব-৫ এর জিজ্ঞাসাবাদে জনি প্রশ্ন ফাঁস করা চক্রের অন্তত ২৫ জনের নাম জানায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের বাড়ি। র‌্যাব কর্মকর্তারা ওই দিন জনির মুঠোফোনের দুটি সিমে বিকাশের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পান।

র‌্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এ এম আশরাফুল ইসলাম জানান, জনির দেওয়া ২৫ জনের নাম র‌্যাব হেডকোয়াটার্সকে তারা জানিয়ে দেন। এরপরই শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। র‌্যাব-৫ এর আওতায় থাকা রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকেও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৫ এপ্রিল নওগাঁর আত্রাইয়ের জয়সারা এলাকা থেকে ফয়সাল হোসেন নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, সাতটি সিমকার্ড, পাঁচটি মেমোরি কার্ড, একটি মডেম, একটি পেনড্রাইভ ও কার্ড রিডার। ৮ এপ্রিল রাজশাহীর তানোর উপজেলার মানিককন্যা গ্রাম থেকে মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে মুক্তা নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া গত রবি ও সোমবার গ্রেফতার করা হয় রাজশাহীর চারঘাট, নওগাঁর মান্দা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা থেকে তিন তরুণকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রের কেউ কেউ পরীক্ষা শুরুর আগের দিন ভুয়া প্রশ্ন ঝাপসা করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা পরীক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই প্রচারণা সারা দিন চলতে থাকে। পরীক্ষার আগের রাতে অন্য একটি ভুয়া প্রশ্নপত্রের আরেকটু পরিষ্কার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। এরপর পরীক্ষার দিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অন্য একটি প্রশ্নপত্রের সম্পূর্ণ কপি প্রকাশ করা হয়। এই প্রশ্নটি দেখতে আসল প্রশ্নপত্রের মতো। এই প্রশ্নপত্রের ওপরে সালের জায়গায় শুধু ২০১৮ লেখা হয়। আবার কখনো কোনো টেস্ট পেপারে উদাহরণ হিসেবে থাকা প্রশ্নের ছবি তুলে সেটিও আসল প্রশ্ন হিসেবে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। আর এসব ভুয়া প্রশ্ন পোস্ট করা হতো ছদ্মনামে খোলা আইডি দিয়ে। শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা ওই প্রশ্ন পেতে চাইলে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা শুরু করেন।

চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের জন্য তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে তাতে আগাম টাকা পাঠাতে বলে। শর্তে রাজি হয়ে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠালে তাত্ক্ষণিক তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এক কপি ভুয়া প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে না মিললে ক্রেতাকে জানানো হয়, সেটটি বাতিল হয়েছে। আর এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর এক স্বজন জানান, তিনি এক হাজার টাকার বিনিময়ে এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন নিয়েছিলেন। ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে তিনি ম্যাসেজের মাধ্যমে চক্রের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিকালে প্রশ্নটি নেওয়ার পর রাতেই তাকে আবার জানানো হয়, সেট পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সেটের প্রশ্ন নিতে আরও এক হাজার টাকা দিতে হবে। তিনি আবার প্রশ্ন নেন। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখেন, দুটি প্রশ্নপত্রই ভুয়া।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইমো ও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ ও সরবরাহ করছে। এবার প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় তারা নকল প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করছে। এভাবে ভুয়া প্রশ্নের জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছিল তারা। এই চক্রের অনেকেই আবার ‘১০০ ভাগ কমন সাজেশনের’ নামেও প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করছে।

সর্বশেষ খবর