শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই সিটির নির্বাচন

প্রচারণায় মুরব্বি নেতারা নেই বড় দুই দলের কপালে ভাঁজ

গাজীপুর

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রচারণায় মুরব্বি নেতারা নেই বড় দুই দলের কপালে ভাঁজ

গাজীপুরে গতকাল আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের জন্য জয়-পরাজয়ের অঙ্ক যেন কঠিন হয়ে পড়ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রচারণায় তীব্রতা আছে, গতিও আছে। সেই সঙ্গে রয়েছে এক ধরনের শূন্যতাও। সেটা কী? মাঠভিত্তিক যেসব প্রভাবশালী নেতাকে ‘মুরব্বি’ গণ্য করা হয়, দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণায় তারা থাকছেন না। এতে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের প্রচারণা টিমের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলা যায়।

ভোটাররা বিশেষভাবে দুই দলের মনোনয়ন বঞ্চিত সিনিয়র নেতার নামোল্লেখ করছেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের আজমত উল্লাহ্ খান এবং বিএনপির অধ্যাপক এম এ মান্নান, যিনি এখনো মেয়র পদে বহাল রয়েছেন। এদের দুজন দলীয় মনোনয়ন পাননি। কর্মীরা এদেরকে বড় মুরব্বি জ্ঞান করেন। এই দুই বড় মুরব্বির মধ্যে একজন- আজমত উল্লাহ খান অবশ্য আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অধ্যাপক মান্নানকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে এখনো প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। মেয়র এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী নাহিদুল ইসলাম জনি জানান, স্যার তো অসুস্থ তাই প্রচারণার মাঠে নামতে পারছেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা রাখবেন বড় দুই দলের মনোনয়নবঞ্চিত দুই নেতা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ্ খান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ মান্নান। কারণ মাঠপর্যায়ে মুরব্বি নেতাদের মতই এই দুজনেরও রয়েছে বহু অনুরাগী ভোটার। এরা যেভাবে সংকেত দেবেন সেভাবেই অনুরাগীরা ভোট দেবেন। বিশ্লেষকদের মতে, হেবিওয়েট এই দুই নেতা নিজেদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাদের যে কোনো একজন মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার বেদনায় ভুগে অথবা অন্য কোনো কারণে দলীয় প্রার্থীর প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করলে প্রতিপক্ষের জন্য বিজয় অর্জন সহজ হয়ে যাবে। ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জেরিনা সুলতানা বলেন, মানুষ এবার অনেক ভেবেচিন্তে ভোট দেবেন। তার মতে, সিনিয়র নেতাদের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে নগরের উন্নয়ন। গাজীপুর মহানগর দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে হাঁটু পানি। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নগরবাসী মুখিয়ে রয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. হাতেম আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাতজন মেয়র পদপ্রার্থী হলেও মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। দুই দলেরই কিছু নেতা এখনো মাঠে নামেননি। তাদের রয়েছে বহু সমর্থক। এই সমর্থকরা ভোটের শেষ বেলায় কী করে বসেন তা অনুমান করা মুশকিল।

আজমত উল্লাহ্ খান বলেন, নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে মাঠে কাজ করে চলেছি। কে কী বলছে পরোয়া করি না। আমার কাছে নেত্রীর নির্দেশই বড় বিষয়। এদিকে, গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, গাজীপুর সদরের সালনা, কাউলতিয়া, পোড়াবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় বিএনপির মান্নান সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, মান্নান স্যারকে মনোনয়ন না দেওয়াটা অন্যায়। আমরা কেন্দ্রে যাব ঠিকই, তবে ভোট কোথায় দেব এখনো জানি না। সালনা এলাকার ভোটার মানিক বলেন, আমরা মান্নান ভাইয়ের সমর্থক হলেও এবার কাকে ভোট দেব এখনো ঠিক করিনি। পোড়াবাড়ী এলাকার ভোটার শামীম খন্দকার বলেন, সদরের প্রার্থীকেই আমি ভোট দেব।

হাসানের ইশতেহার ঘোষণা, জাহাঙ্গীরের ব্যাপক প্রচারণা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই পক্ষের তৎপরতা জমে উঠেছে। তার মধ্যে গতকাল বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন।

ইশতেহার ঘোষণা : হাসান উদ্দিন সরকার সকাল ১০টার দিকে তার টঙ্গী বাসভবনে ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাসাসের সিনিয়র সহসভাপতি বাবুল আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল মতিন, আবুবকর সিদ্দিক, মাওলানা এস এম রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঘোষিত ১৯ দফা ইশতেহারে নগরায়ণের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, নগর ভবন নির্মাণ, সেবাদানকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়, দুর্নীতি দূরীকরণ ও স্বচ্ছতা, শিক্ষার উন্নয়ন, খাদ্যসেবা ও নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থা, আবাসনব্যবস্থা, নগরীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা গ্রহণ, যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট ও পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরের পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়া, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদনব্যবস্থার উন্নয়ন, নাগরিক সেবা আধুনিকীকরণসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার করেছেন।

জাহাঙ্গীরের প্রচারণা : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সকাল থেকে প্রচার তৎপরতার পর বিকালে টঙ্গীতে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধুমিতা এলাকায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচারণায় নামেন। তিনি ৪৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি মধুমিতা রেলগেট, বউবাজার, জামাইবাজার, বিসিক, মিরাশপাড়া, নদীবন্দর, সালামের আটার কল, টঙ্গী রেলস্টেশন, নতুন বাজার, গাজীবাড়ী ও টঙ্গী বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এর আগে সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়দানা সড়কে প্রচারণা চালান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে মেয়র প্রার্থী, নির্বাচন কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার : দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মেয়র প্রার্থী, নির্বাচন কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির গণসংযোগ ও প্রচারণায় মামলার আসামি ও সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ নেই। কোনো রাজনৈতিক সভায় কোনো নেতা যদি কোনো ব্যাপারে অভিযোগ তোলেন, তাহলে ওই বিষয়টি আমরা তখনই আমলে নিতে পারি, যখন আমাদের কাছে লিপিবদ্ধ উত্থাপিত হবে। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত জানি না ওই ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে কিনা। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল জানান, তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি।

তিন কেন্দ্রে ইভিএমের প্রস্তাব : গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর মতবিনিময় সভায় জানান, নির্বাচন কমিশনে তিনটি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো রানী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর