চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বর্তমান ভিপি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের ছেলে রায়হান চিশতী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক। কিন্তু তার বাবা এখনো চবির ভিপি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের দীর্ঘ ২৮ বছর নির্বাচন না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। ওই নির্বাচনে সহসভাপতি মো. ইব্রাহিম ও সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রব। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন আবদুর রব; যার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি হল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭১-৭২ ও ’৭২-৭৩ সালে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ বছর আগে চাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) হন মো. নাজিম উদ্দিন। এই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিটিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে এখনো চাকসুর ভিপি হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। তার কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। এদিকে চাকসু নির্বাচন হলে বড় ধরনের সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে চবি কর্তৃপক্ষ। ফলে নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না বলে নানা মহলে গুঞ্জন রয়েছে। উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচন দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত, বিরোধ, হানাহানি এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো যদি দায়িত্ব নেয় এবং তারা যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের গ্যারান্টি দেয় তাহলে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা করা যেতে পারে।’ চবিসূত্রে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এতগুলো বছরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাঁচ দফা ক্ষমতার পালাবদল করেছে। কিন্তু ২৮ বছর আগের এক বছর মেয়াদের চাকসু এখনো বহাল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পাল্টালেও পরিবর্তন হচ্ছেন না ভিপি-জিএস। বর্তমান ভিপি নাজিম উদ্দিনও চাকসু নির্বাচন চান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় প্রচুর নেতৃত্ব থমকে যাচ্ছে। দেশও নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে না। এ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা থাকলে আজকে দেশ পেত ২৮ জন ভিপি ও ২৮ জন জিএস। যে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে দেশ অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
চবিসূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর আগে গত ২৮ বছরে আটজন শিক্ষক চবির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের কেউ চাকসু নির্বাচন দেওয়ার উদ্যোগ নেননি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর ২২ ধারা অনুযায়ী সিনেটের ১০১ সদস্যের পাঁচজন হবেন ছাত্র প্রতিনিধি। কিন্তু চাকসু না থাকায় সিনেটে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিনেট সভা।