শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা শুধু উপদেশই দেন

—বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে কাজ করছেন এমন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পেশাদারিত্বের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তারা শুধু উপদেশই দিয়ে যান, তবে এ খাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে তারা দ্বিধান্বিত। এজন্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাত এখনো পিছিয়ে আছে। গতকাল ঢাকা ক্লাবে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘এলএনজি ইমপোর্ট : অপারচুনিটিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হলে দেশে বড় আকারে উৎপাদনশীলতার সুযোগ তৈরি হবে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। আর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে শিল্পকারখানায় উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমি একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, সরকারি যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকেন তখন তিনি তার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজে আসবে এমন বুদ্ধি দেন না। কিন্তু দায়িত্ব পালন শেষে তারা ঠিকই বিভিন্ন উপদেশ দেন। আবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) কর্মকর্তারা চান না যে, এ প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী হয়ে উঠুক। তারা নিজেরাই “প্রোটিন” খেতে চান না। আমি তাদের চার বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিতে বলেছিলাম কিন্তু তারা তা পারছেন না।’ নসরুল হামিদ আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এবং দক্ষ জনবল কাঠামো গড়ে তুলতে ভবিষ্যতে বিদেশে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের খুব প্রয়োজন ছাড়া প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে না। বাংলাদেশ এ খাতের উন্নয়নে দেশেই সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যাচ্ছে। এজন্য এরই মধ্যে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াসহ এ খাতে দক্ষ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। জ্বালানি খাতে আগামীতে কী ধরনের চাহিদা তৈরি হবে সেজন্য এরই মধ্যে আমরা জরিপ করেছি। এটি বাস্তবায়নে বিশ্বমানের ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। আমরা নিজেরাই এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে কাজ করব। বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিযোগ্য জ্বালানি বাজার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরনো ও অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে শুরু করেছি। আর তেল দিয়ে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হয় তার পরিধিও কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ছাড়া এলএনজির দাম নির্ধারণে কাজ করছি।

যেহেতু এই জ্বালানিটির ক্রমাগত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নও পাওয়া যাচ্ছে এজন্য এলএনজি নিয়ে আমরা বড় আকারে কাজ করতে আগ্রহী। একই সঙ্গে আঞ্চলিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানির জন্যও কাজ করছি।’ তার মতে, এলএনজি আমদানি ‘দামি’ অভিজ্ঞতা কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে এটি স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে জ্বালানি খাতে সরকারকে আরও তিন থেকে চার বছর ভর্তুকি দিতে হবে বলেও তিনি জানান।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, এলএনজির ফলে দেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এ দাম বাজারদরের ওপর সংগতিপূর্ণ হতে হবে। আর দামও গ্রাহকপর্যায়ে সহনশীল হতে হবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘এলএনজির দাম নির্ধারণে জ্বালানি বিভাগের সচিব সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যে বৈঠক করেছেন তার কার্যবিবরণী দেখে আমি আতঙ্কিত হয়েছি। সেখানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৩ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এখন চিন্তার বিষয়, এলএনজি আমাদের জন্য অপরচুনিটি না থ্রেট!’

এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মুক্তাদির আলী ও জিটিসিএলের সাবেক পরিচালক সালেক সুফি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর