শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ময়ূরের দৃষ্টিনন্দন পেখম

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ময়ূরের দৃষ্টিনন্দন পেখম

স্বভাবগতভাবেই ময়ূর তার ঝলমল পাখা ছড়িয়ে চমৎকার নৃত্য প্রদর্শনের জন্য খ্যাত। প্রজননের সময় ময়ূর এই ঢংয়ে সাজে। ময়ূরের এই চোখ জুড়ানো প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ময়ূরীদের আকৃষ্ট করা। ময়ূরের চমৎকার প্রদর্শনের প্রতি ময়ূরীদের বিশেষ দুর্বলতা কাজ করে। আকর্ষণীয় নৃত্য প্রদর্শনকারী ময়ূরকে ময়ূরী সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করে। বর্ষাকাল মূলত ময়ূরের প্রজননকাল। বর্ষাকালের আগমনী বার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ময়ূর সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সময় ময়ূরের পূর্ণ পেখম মেলার দৃশ্য পার্কে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে।

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান জানান, ময়ূরের প্রজননের সময় বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালে ময়ূরীর সঙ্গে মিলনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণে পেখম মেলে ময়ূর। যে ময়ূর পেখম তুলে যতটা সুন্দর নাচ প্রদর্শন করতে পারবে মিলনের জন্য সে ততোটাই ময়ূরীর কাছে আকর্ষিত হবে। ময়ূর প্রথমে তার লম্বা পেখম সামনের দিকে বাঁকা করে পাখার মতো ছড়ায়। এরপর সে তার নজরকাড়া নাচ শুরু করে। সে যখন তার শরীর ঝাঁকায় তখন রঙিন বর্ণের পালকগুলো এর শরীরের দু’পাশে ঝুলে থাকে ও এই ঝাঁকানির ফলে খাড়া হয়ে থাকা পালকগুলো মর্মরধ্বনি করে। এ ছাড়া সে জোরে চিৎকার করে। ময়ূরের এ আওয়াজ তেমন মধুর না হলেও এর মাধ্যমে ময়ূরীকে জানায় যে, সে তার প্রতি মিলনে আগ্রহী। একটি ময়ূর একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ময়ূরী সঙ্গিনী হিসেবে রাখে। সাফারী পার্কের সংরক্ষিত ময়ূর বেষ্টনিতে গিয়ে দেখা যায়,পার্কে ময়ূরের পেখম মেলার দৃশ্য এখন পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরাও সংরক্ষিত ময়ূর বেষ্টনীতে ভিড় করছেন। ময়ূর ফ্যাজিয়ানিডি প্রজাতির সুন্দর প্রাণী। এশিয়া অঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের ময়ূরের দেখা পাওয়া যায়। এদের রং হয় নীল ও সবুজ, মাঝে মাঝে সাদা রঙের ময়ূরের দেখাও মেলে। এরা সাধারণত বনের ভিতর মাটিতে বাসা বাঁধে। এরা চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদ প্রাণী খায়। এরা ডিম পাড়ে ও ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এদের বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতোই মায়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বাচ্চাগুলো বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে এসে লুকায়। ময়ূরের ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতোই বেড়ে ওঠে। আকারের দিক দিয়ে ময়ূর ৭ ফুট লম্বা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের পেখমের দৈর্ঘ্য তিন ফুট পর্যন্ত হয়। এদের পেখমে রয়েছে নীল, সবুজ, সোনালীসহ বাহারী রঙের সমাহার। অনেকেই ময়ূরের পেখমের পালক সৌন্দর্য হিসেবে ঘমরর দেয়ালে প্রদর্শন করে রাখে। ময়ূর কিন্তু তার এই সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মলাভ করে না। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লেজ জন্মে না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী ও পুরুষ হিসেবে আলাদাভাবে বোঝা যায় না। ময়ূর এবং ময়ূরী দেখতে একই রকমের হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়স থেকে ময়ূর রং বদলাতে শুরু করে। ময়ূর প্রতি বছর প্রজননের পর পেখম বদলায়। সে সময় পাখাগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। ময়ূর তার বন্যজীবনে গড়ে ২০ বছর বাঁচে। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও ময়ূর উড়তে পারে না। মধ্যযুগে ময়ূর ছিল আভিজাত্যপূর্ণ খাবার। এদের রোস্ট করে আবার পালক বসিয়ে খাবারের টেবিলে পরিবেশন করা হতো। পাখিটি দেখতে অতি সুন্দর হলেও ফিজিয়ানরা খাবার হিসেবে এর সমালোচনা করেন কারণ ময়ূরের মাংস শক্ত এবং মোটা, হজমেও সমস্যা তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, পার্কের সূচনালগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ময়ূর আনা হয়। বর্তমানে এর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। কিছু ময়ূরকে পার্কের আবদ্ধ পরিবেশ থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে এদের পরিচর্যা করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি এদের বিশেষ যত্ন নেওয়ায় দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটছে ময়ূরের। বর্ষাকালে পার্কের ময়ূর বেষ্টনীতে দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর