বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগ দেখছে জয় বিএনপিতে সংশয়

সিলেট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আওয়ামী লীগ দেখছে জয় বিএনপিতে সংশয়

সিলেটে প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান বিপরীত মেরুতে। আওয়ামী লীগ যেখানে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী, বিএনপি সেখানে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আছে সংশয়ে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, নির্বাচনে তাদের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকায় জয় এবার সহজ হবে। অন্যদিকে বিএনপি বারংবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। ভোট যদি সুষ্ঠু হয়, তবে জয় নিশ্চিত বলে মনে করছে দলটি। এদিকে সিলেট সিটি নির্বাচনে জয়ের পাল্লা ভারী করতে উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার সিসিকের চতুর্থ নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া আরও পাঁচজন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। সিসিকের তিন নির্বাচনের দুবারই জয়ের মালা পরেছিল আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ নির্বাচনে এসে হোঁচট খায় দলটি। এবার তাই নগর ভবনে ফিরতে মরিয়া তারা। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পেছনে অনৈক্যকেই দায়ী করা হয়। তবে এবার নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ঐক্যের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের নেতাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়ার নির্দেশ দেন। কামরানের পক্ষে প্রচারণায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা যেমন ব্যস্ত, তেমন কেন্দ্রীয় নেতারাও এখানে সরব। দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সপ্তাহখানেক ধরে টানা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া সিলেটে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল, প্রচারণা চালিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এবার নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেখানেই মিলছে ব্যাপক সাড়া। মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবে বলে মনে করছে তারা। দলগত ঐক্য থাকায় জয়ের সম্ভাবনা এবার অনেকটাই বেড়ে গেছে, এমনটাই দাবি আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। তাই নৌকা প্রতীকে জোয়ার উঠেছে। কামরান জনতার নেতা। আরিফ হত্যা মামলার আসামি। যারা পেট্রলবোমার রাজনীতি করে, তাদের প্রার্থী আরিফ। চারদিকে যেভাবে নৌকার জোয়ার উঠেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষ এবার আর ভুল করবে না। তাদের প্রকৃত আপনজন কামরানকেই জয়ী করবে।’ এদিকে সিলেট সিটিতে আবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। কিন্তু তাদের শঙ্কা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি বলছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটির মতো সিলেটেও ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা হতে পারে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তবে আরিফকে কেউ আটকাতে পারবে না বলে মনে করছে বিএনপি।

 দলটির নেতারা বলছেন, মেয়র থাকাকালে অধিকাংশ সময়ই কারাগারে ছিলেন আরিফ। বাকি স্বল্প সময়ে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে নগরবাসী আবারও তাকেই ভোট দেবেন। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় থাকলেও বসে নেই বিএনপি। দলটির স্থানীয় নেতারা যেমন প্রচারণায় ব্যস্ত, কেন্দ্রীয় নেতারাও তেমনই সক্রিয়। কয়েক দিন ধরে সিলেটে ধানের শীষের প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান মিজান। গতকাল প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আসপিয়া। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ‘ধানের শীষে ভোট দিতে মানুষ আগ্রহী। মেয়র থাকাকালে স্বল্প সময়ে আরিফ যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে নগরবাসীর মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সিলেটে আবারও জয়ের ব্যাপারে তাই বিএনপি আশাবাদী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না। মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। বিগত সময়ে কোনো নির্বাচনে সরকার সুনাম অর্জন করতে পারেনি। অতীতের নির্বাচনগুলোর কথা স্মরণ করলে মানুষ শঙ্কিত হয়। আমরা চাই, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হোক।’ এদিকে গতকাল নগরীর শামীমাবাদ, বর্ণমালা পয়েন্ট, নরসিংটিলা বাগবাড়ী, আদালতপাড়া প্রভৃতি এলাকায় প্রচারণা চালান কামরান। অন্যদিকে মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন আরিফ।

সর্বশেষ খবর