মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামায়াত ছাড়তে চায় বিএনপি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জামায়াত ছাড়তে চায় বিএনপি

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে আর জোটের সম্পর্ক রাখতে চায় না সিলেট বিএনপি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোট সমর্থিত বিএনপি প্রার্থীর বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানো এবং নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় জামায়াতকে এখন কাগুজে বাঘ ভাবছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেও কেন্দ্রীয় নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন তারা। রবিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় মহাসচিবসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা এ দাবি জানান। জোটসঙ্গী হলেও সিলেটে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। বিগত আন্দোলনগুলোতেও দেখা যায়নি কেউ কারও পাশে দাঁড়াতে। এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চরম আকার ধারণ করে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। জোটের শরিক সব দলের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়া হলেও বেঁকে বসে জামায়াত। জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। বিএনপির পক্ষ  থেকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারে অপারগতা প্রকাশ করে জামায়াত। সিটি  করপোরেশন এলাকায় তাদের ৫০ হাজারের বেশি ভোট রয়েছে বলেও প্রচার চালায় তারা। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে মিইয়ে যায় জামায়াতের হম্বিতম্বি। জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের ভোটের হিসাব দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯৫৪-এ।  নৌকা-ধানের শীষের মূল লড়াইয়ে জামানত হারাতে হয় জামায়াত প্রার্থীকে। নির্বাচনে জামায়াতের ৫০ হাজার ভোটের হিসাব অলীক স্বপ্ন ছিল বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট গঠন করলে সাধারণ মানুষের কাছে জোটের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এনিয়ে রবিবার সিলেটের নেতারা গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সফলতা ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। এ সময় তারা সিটি নির্বাচনে জামায়াতের অবাধ্যতা ও স্থানীয় পর্যায়ে দলটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা। জামায়াতের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলী আহমদ বলেন, জামায়াত কখনো বিএনপির বন্ধু সংগঠন ছিল না। তাদের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক কোনো সম্পর্কও নেই। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে তাদের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু সিলেটে জামায়াতের কোনো গণভিত্তি নেই। সিটি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে জামায়াত কাগুজে বাঘ। কাগুজে বাঘদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ‘যুদ্ধাপরাধীদের দলের বন্ধু’ এই অপবাদ নিতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজি নয়।’ ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত প্রমাণ করেছে তারা সুসময়ের বন্ধু। একই সঙ্গে তারা যে গণবিচ্ছিন্ন তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ভোটের মাঠে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় করা সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট গঠন করতে।’ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঙ্গে মুঠোফোনে  একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর