মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাল্টে যাবে ২০ লাখ কওমি শিক্ষার্থীর কর্মজীবন

মন্ত্রিসভায় সমমর্যাদার খসড়া অনুমোদন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

অবশেষে কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরা হাদিসকে মাস্টার্সের সমমর্যাদার আইনের খসড়া অনুমোদন দিল সরকার। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে দাওরা হাদিসকে ‘ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য’ এ দুটি বিষয়ে মাস্টার্সের সমমানের মর্যাদা দিয়ে আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এ আইনটি সংসদে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দেশের মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরবে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে ইতিবাচকভাবে পাল্টে যাবে কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ২০ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো কওমি শিক্ষার্থীরাও চাকরিসহ সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।

বেফাক সহ-সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আজ কওমিদের জন্য ঐতিহাসিক দিন। দাওরা হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদার আইনের খসড়া অনুমোদনের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এ মর্যাদার মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো কওমি শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি তা বাস্তবায়ন করেছেন। যুগান্তকারী এ আইন পাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কওমি সমাজের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।’ 

জানা যায়, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। যার মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পুরুষ এবং দুই হাজারের বেশি মহিলা মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ লাখ। শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ৮০ হাজার। কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে আসছিল ছোট-বড় কমপক্ষে ২৫টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। কওমি শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম হলো বেফাক, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ, আঞ্জুমানে ইত্তিহাদিল মাদারিস, তানজিমুল মাদারিস, এদারায়ে তালিমিয়া দীনি বোর্ড, আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম সিলেট, মাদারিসিল কওমীয়া বাংলাদেশ, কুমিল্লা তানযীমুল মাদারিস, দক্ষিণ ঢাকা এদারা, কওমী মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ, দ্বীনি শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল মাদারিস কওমীয়া ও ইলহাকুল মাদারিস। তবে সব কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সরকার মাদ্রাসার মাস্টার্সের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গঠিত বোর্ড ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র মাধ্যমে সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এখন থেকে সরকার স্বীকৃত এ শিক্ষা বোর্ডের অধীনের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স সমমানের সনদ নেবে। কওমি মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদ-চট্টগ্রামের প্রধান উপদেষ্টা আ ন ম আহমদ উল্লাহ বলেন, এতদিন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ পেত না। একই সঙ্গে বঞ্চিত হতো সরকারি অন্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও। মাস্টার্সের সমমর্যাদার আইন সংসদে পাস হলে কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন পাল্টে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর