বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

১২ গুচ্ছগ্রামে ৪৭০ পরিবারের পুনর্বাসন

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

১২ গুচ্ছগ্রামে ৪৭০ পরিবারের পুনর্বাসন

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে নির্মিত চট্টগ্রামের হাজীগাঁও গুচ্ছগ্রাম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আট উপজেলায় ১২ গুচ্ছগ্রামে ৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় আরও পাঁচ উপজেলায় চলছে তিন কোটি টাকার কাজ। পৃথক পাঁচটি প্রকল্পের আওতায় সুফল পাবে আরও ১৯৫টি পরিবার। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘শেখ হাসিনার অবদান গৃহহীনের জন্য বাসস্থান’ শীর্ষক শিরোনামে ৪১ দশমিক ৮৫ একর ভূমিতে আটটি উপজেলায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৮ দশমিক ৫০ একর ভূমিতে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণকাজ চলমান। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হওয়া এসব প্রকল্প জেলা প্রশাসনের পক্ষে স্থানীয়ভাবে তদারক করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষদের বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের বিশেষায়িত একটি উদ্যোগ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। দারিদ্র্য বিমোচনে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখছে।’ আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ বলেন, ‘আনোয়ারায় ইতিমধ্যে একটি গুচ্ছগ্রামে ৪০টি পরিবার বসবাস করা শুরু করেছে। আরও একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণকাজ চলমান। আমরা মনে করি, ভূমিহীন মানুষের পুনর্বাসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভূমিহীন কিছু মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন।’ গুচ্ছগ্রামে ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত জরিনা বেগম বলেন, ‘আগে কখনো ভাড়া, কখনো এদিক-সেদিক থেকে দিন পার করতাম। কিন্তু এখন এই গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর পেয়ে রোদ-বৃষ্টিতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। পরিবার নিয়ে এখন ভালোই আছি।’ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পটিয়ার সাপমারা গুচ্ছগ্রামে দুই একর ভূমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে ৫০ পরিবার, লোহাগাড়ার চারম্বা গুচ্ছগ্রামে ১ দশমিক ৬০ একর ভূমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে ১০টি পরিবার।

 রাউজানের ডাবুয়ায় ৭ দশমিক ২৪ একর ভূমিতে ৪০টি পরিবার, ফটিকছড়ির পশ্চিম ভুজপুরে পাঁচ একর ভূমিতে ৪০টি পরিবার, মিরসরাই দক্ষিণ অলিনগরে ৪ দশমিক ৩০ একর ভূমিতে ৭০টি পরিবার, চরকালিদাসে ৩ দশমিক ৩৩ একরে ৭০টি পরিবার এবং সোনা পাহাড়ে আট একরে ৫০টি পরিবার, রাঙ্গুনিয়ায় জঙ্গল ঘাটচেক-১-এ শূন্য দশমিক ৪৬ একরে ১০টি পরিবার ও জঙ্গল ঘাটচেক-২-এ শূন্য দশমিক ৪৬ একরে ১০টি পরিবার, হাটহাজারী মির্জাপুরে ১২ দশমিক ১০ একরে ৪০টি পরিবার, আনোয়ারার হাজীগাঁওয়ে দুই একরে ৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এ ছাড়া চন্দনাইশের ইস্ট এলাহাবাদে দুই একরে ৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পাঁচটি উপজেলায় আরও পাঁচটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের কাজ চলমান। এর মধ্যে পটিয়ার কেলিশহর সাপমারা গুচ্ছগ্রামে দুই একরে ৩৮ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসন করা হবে ২৫টি পরিবার। রাউজানের কদলপুর দেড় একর ভূমিতে ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসন হবে ৪০টি পরিবার। ফটিকছড়ির হাঁপানিয়ায় পাঁচ একর ভূমিতে ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পে পুনর্বাসিত হবে ৫০টি পরিবার। রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর গাবতলে দুই একর ভূমিতে ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসিত হবে ৫০টি পরিবার। আনোয়ারা হাজিগাঁও-২ গুচ্ছগ্রামে এক একর ভূমিতে ৪৭ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসন করা হবে ৩০টি পরিবার।

 

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক এক প্রতিবেদন মতে, ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার গুচ্ছগ্রাম (ক্লাইমেট ভিকটিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দেশের সাতটি বিভাগের ৫৩টি জেলার ১৩১টি উপজেলায় ২৫৩টি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৭০৩টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন ও নদীভাঙনকবলিত পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান লক্ষ্মীপুর) জেলার রামগতি থানা পরিদর্শনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদীভাঙা, দুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাস জমিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সেই সময় বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় চারটি গুচ্ছগ্রামে এক হাজার ৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। এরপর সামরিক শাসক এরশাদের আমলে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদে নেওয়া হয় গুচ্ছগ্রাম (পরে তা আদর্শ গ্রাম নামকরণ হয়)। ১৯৯৮ সালের জুলাই থেকে আদর্শ গ্রাম প্রকল্প-২ নামে আবার নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। গুচ্ছগ্রাম ও আদর্শ গ্রাম প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ৮১ হাজার ৭৩৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করা। এ জন্য নির্মিত ইকোভিলেজে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে এবং বিধবাদের ক্ষেত্রে একক নামে বসতভিটার কবুলিয়াত প্রদান করা হয়। এতে মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা মেলে। একই সঙ্গে ৪ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত জমির নিষ্কণ্টক মালিকানা, সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ ও সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুযোগ তৈরি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর