শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেই ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন পূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সেই ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন পূর্তমন্ত্রী

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাটে আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সেই বিশৃঙ্খলার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাবেন বললেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তিনি বলেন, রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এ ঘটনায় অবশ্যই ইন্ধন রয়েছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, দলের মধ্যে বিভ্রান্তি, উন্নয়ন কাজের চিত্র জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর কাজে যারা বাধা সৃষ্টি করছে তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। ফটিকছড়ির বিভিন্ন পথসভার বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতির ভিডিও দেখান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসীর সম্পর্ক নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বিষয়টি দেখবে। সে (আবু তৈয়ব) দলের কেউ নয়। নিজের হাতে অনেক নেতা তুলেছি। তারাই এখন আমার বিরোধিতা করছে। ছেলেরা যদি বেয়াদবি করে, আমাকে অবশ্যই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সব উপজেলায় সরকারের উন্নয়নচিত্র জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য পথসভা করব আমরা। দক্ষিণ জেলা ও কক্সবাজারেও প্রয়োজনে প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব। এর আগে থেকেই সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির চিত্র তুলে ধরতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি থানায় বা উপজেলায় পথসভা ও সমাবেশ চলমান রয়েছে। সেই কর্মসূচির অংশ ছিল নাজিরহাটেও। এতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বৃহস্পতিবারের সমাবেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচটি পথসভার মধ্যে চারটি জনসভায় পরিণত হয়েছিল জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজাদী বাজারের পথসভায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন স্লোগান দিয়ে পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করেছিল। তাই রাগ করে আমি বক্তৃতা দিইনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ বছরের সোনালি সময়ের উন্নয়নবার্তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মিরসরাই থেকে পথসভার কর্মসূচি শুরু করেছি। ফটিকছড়িতেও চারটি পথসভা জনসভায় পরিণত হয়। আজাদী বাজারের পথসভায় আমি বক্তৃতা দিইনি। তবে সামান্য উত্তেজনাকে মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। অথচ চারটি সফল জনসভার খবর নেই। আমি অনুরোধ করব, সফলতার কথাও যেন প্রচার করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ১০ বছরে এত উন্নয়ন হয়েছে যে, ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মান্নাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। ফটিকছড়ির সংসদ সদস্যের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে ১৪ দলের মনোনয়নে নির্বাচিত একজন এমপি আছেন। আবার যদি মনোনয়ন পান, আবার কাজ করব। তবে দলে নেতা-কর্মীরা চান, এখানে দলীয় প্রার্থী যেন মনোনয়ন পায়। তবে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন যাকেই দেন, তার পক্ষেই কাজ করব আমরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সিডিএ বোর্ড সদস্য জসীম উদ্দিন শাহ, সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে ফটিকছড়ি উপজেলায় পাঁচটি পথসভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ। নানুপুর ইউনিয়নের আজাদী বাজারে দুপক্ষের পাল্টা-পাল্টি স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে বক্তব্য না দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় বিবদমান নেতা-কর্মীরা মারামারিতেও জড়ায়। এ ছাড়া নাজিরহাট ঝংকার মোড়ে আরেকটি পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর হলেও সেখানে পরে সভা করেন মন্ত্রী। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তৈয়বের অনুসারীদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আর এতে ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়নে নির্বাচিত ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ইন্ধন আছে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগে দুটি ধারা রয়েছে। একটির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আলম এবং আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এইচ এম আবু তৈয়ব। এই দুই নেতার পক্ষে আছেন তরিকত ফেডারেশন থেকে নির্বাচিত এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী। সঙ্গে আছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর