সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
জড়িত দেশি-বিদেশি এনজিও ও রোহিঙ্গা দালাল

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করছে চক্র

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করছে চক্র

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে দেশি-বিদেশি চক্র। বিশেষ করে নিজ দেশ মিয়ানমারে না ফিরতে রোহিঙ্গাদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর ছদ্মাবরণে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে অনাগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে কিছু এনজিও, এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে শেষ মুহূর্তে ১৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের প্রশংসনীয় এ উদ্যোগ বাধার মুখে পড়ায় সংশ্লিষ্ট মহল ও এলাকাবাসী অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। আবার অধিকাংশ এনজিওর কর্তাব্যক্তিরা চান না রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। এতে রোহিঙ্গা শিবিরে বিদেশি অর্থসহায়তায় চলা প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, এ আশঙ্কায় কতিপয় এনজিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রত্যাবাসনবিরোধী কাজে তৎপর বলে জানিয়েছেন প্রশাসন ও স্থানীয় লোকেরা। এতে যারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী ছিল তারাও বিমুখ হয়ে পড়েছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের বিভ্রান্ত করছে কিছু এনজিও, এমন তথ্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছেও রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রত্যাবাসনবিরোধী এনজিওগুলোর তৎপরতার কারণে ক্যাম্পে দিন দিন প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গার সংখ্যাও বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কেউ দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেই তাদের হুমকি দেওয়া হয়, তারা অপহরণের শিকার হয় প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসী চক্রের হাতে। গত এক বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসী চক্রের হাতে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অপহরণের শিকার হয়েছে। এদের অনেকের পরে আর খোঁজ মেলেনি। এ কারণে নিজ দেশে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারাও ভয়ে আর মুখ খুলছে না। এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৬ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে রোহিঙ্গা নেতা মো. ইউসুফকে (৪৬)। একই দিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি আরিফ উল্লাহকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার বড় ভাই মৌলভী আজিম উল্লাহর শরীরে বিদ্ধ হয়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ আলম নামের এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।     এ ক্যাম্পে ৮০ জন মাঝির মাধ্যমে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ইউসুফ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলী জানান, নিহত ইউসুফ মিয়ানমারের মংডু বলিবাজার ধুনহাই গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং মধুরছড়া লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এবং মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আবুল কাশেমের ছেলে মমতাজ মিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা মৌলভী আরিফুল্লাহকে আটক করা হয়। এ ব্যাপারে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ (যুগ্ম সচিব) রেজাউল করিম বলেন, প্রত্যাবাসনবিরোধী কিছু রোহিঙ্গা হঠাৎ হঠাৎ জড়ো হয়ে কিছু কথা বলে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আরও খারাপের দিকে যাবে। এদিকে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ জানান, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সখ্য রয়েছে এমন শত শত দালালচক্র (বর্মি এজেন্ট) ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। ওই দালালচক্র মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে ক্যাম্পে কর্মরত কিছু এনজিও। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করছে, এমন এনজিওর মধ্যে কয়েকটি প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতায় যুক্ত রয়েছে, এ তথ্য আমাদের হাতেও রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও এ বিষয়ে নজরদারি রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি।’

সর্বশেষ খবর