সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানসিক রোগী সাজিয়ে তালাবন্দী রাখার পর উদ্ধার ব্যবসায়ী

সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বাবাকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধু সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজ সন্তান কর্তৃক অপহূত আবুল কালামকে (৬০) বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকার আদালতের একদল আইনজীবী তেজগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় ফার্মগেটের একটি ক্লিনিকের বদ্ধ কেবিন থেকে তাকে উদ্ধার করেন। পুলিশ জানায়, পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবুল কালামকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা অপহরণের পর ৩৫ দিন বন্দীদশায় রাখেন। এ সময় তাকে অমানুষিক নির্যাতনের পাশাপাশি ক্লিনিক্যালি ‘পাগল’ আখ্যায়িত করতে নানা রকম পাঁয়তারা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উদ্ধারের পর থানা হেফাজতে থাকা ভুক্তভোগী আবুল কালাম জানান, ১৮ অক্টোবর রাতে অপহরণের পর থেকেই তাকে রাজধানীর ফার্মগেটের ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড নামক বেসরকারি ক্লিনিকের একটি কেবিনে সার্বক্ষণিক তালাবন্দী করে রাখা হয়। প্রায়ই গভীর রাতে ছেলে আশিক কালাম ওই কেবিনে ঢুকে তার ওপর নির্দয় নির্যাতন চালাতেন। স্টিল পাইপ, লোহার রড ও পানিভর্তি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে আবুল কালামের ওপর নির্যাতন চালানোর ফলে  তার সারা দেহে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ফুটে ওঠে। পুরান ঢাকার চকবাজারের সুপ্রাচীন কালাম স্টোরসহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবুল কালামের বিপুল পরিমাণ সহায়সম্পদ হাতিয়ে নিতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা তিন বছর ধরে একের পর এক মামলা করে আসছেন।  উদ্ধার হন যেভাবে : একদল তরুণ আইনজীবীর টানা অনুসন্ধানে ধনাঢ্য আবুল কালামের বন্দী রাখার স্থানটি আবিষ্কৃত হয়। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশের অভিযানে তাকে উদ্ধার করা হয়। অ্যাডভোকেট খালেদ মাসুদ মজুমদার জানান, আবুল কালাম অপহরণের পর থেকেই তার ছেলে আশিক কালাম মামলা পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাকে হুমকি দিতে থাকেন। এরই মধ্যে কালাম স্টোরের ম্যানেজার আবুল হোসেন চকবাজার থানায় আবুল কালাম নিখোঁজ-সংক্রান্ত জিডি করেন। এ জিডির সূত্র ধরেই অ্যাডভোকেট এস কে ডি মুন্না, অ্যাডভোকেট মামুন, অ্যাডভোকেট মেহেদীসহ সাত-আটজন আইনজীবী আবুল কালামের সন্ধানে খোঁজ নিতে থাকেন। একপর্যায়ে ফার্মগেট এলাকার ১৪৯ নম্বর এয়ারপোর্ট রোডের ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড হাসপাতালের একটি তালাবদ্ধ কক্ষে রহস্যজনকভাবে একজনকে আটকে রাখার খোঁজ পান তারা। সেখানে দুই দিন চেষ্টার পর নিশ্চিত হন, কেবিনে আটকে রাখা লোকটিই হচ্ছেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম। ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সার্চ ওয়ারেন্ট চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ারেন্ট ইস্যু করতেই আইনজীবীরা তা নিয়ে তেজগাঁও থানায় পৌঁছান। তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে তত্ক্ষণাৎ ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর সেন্টুর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড হাসপাতাল থেকে  বন্দীদশায় থাকা আবুল কালামকে উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর