রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী হাওয়া সারা দেশে

মাঠে নেই মনোনয়নবঞ্চিতরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও বরিশাল

মাঠে নেই মনোনয়নবঞ্চিতরা

ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে সিলেট জেলায়। এসব আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন প্রায় অর্ধশত নেতা। তবে সবার ভাগ্যে মনোনয়ন নামক সোনার হরিণ জুটেনি। মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের অনেককেই এখন প্রচারণার মাঠে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ দায়সারাভাবে প্রচারণায় থাকলেও তাদের আন্তরিকতা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে অতিগুরুত্বপূর্ণ সিলেট-১ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ আসনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেনকে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিত ছহুল হোসাইনকে একবারের জন্যও নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় দেখা যায়নি। অবশ্য তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনোই সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এবার মনোনয়ন চাইলেও তা না পেয়ে মাঠে নেই ছহুল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অনেকেই ছহুলকে ‘দুধের মাছি’ বলে অভিহিত করছেন। সিলেট-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। তবে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ক্ষোভে-হতাশায় বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন ইনাম চৌধুরী। এ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির মনোনয়ন পেয়েছেন।

সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অর্ধডজন নেতা। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর ওপরই ভরসা রেখেছে আওয়ামী লীগ। এ আসনের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের     চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুর রকিব মন্টুকে প্রচারণার মাঠে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ দায়সারাভাবে প্রচারণা চালিয়ে কাজ শেষ করছেন। এ আসনে বিএনপি সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালামকে প্রার্থীর সঙ্গে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা বিচ্ছিন্নভাবে গণসংযোগ করছেন। সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেকে একেবারেই গুটিয়ে নিয়েছেন। সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ আল কবীর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাক আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর ফয়জুল মুনীর চৌধুরী। তন্মধ্যে ফয়জুল মুনীর স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আহমদ আল কবীর নিজের নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় না থাকলেও সিলেট-১ আসনে মোমেনের প্রচারণা সেলের সমন্বয়ক হয়েছেন। আর মোস্তাক আহমদের দেখা মিলছে না কোথাও। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, যারা শুধু প্রার্থী হওয়ার জন্য রাজনীতি করতে চান, তাদেরকে চিনে রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত।

বরিশালে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের পাশে নেই মনোনয়নবঞ্চিতরা : বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে নেই একই দল কিংবা জোটের মনোনয়নবঞ্চিতরা। এতে ওই সব আসনে পূর্ণ শক্তি পাচ্ছেন না ফ্রন্টের প্রার্থীরা। কেউ মান-অভিমানের কারণে, আবার কেউ পুরনো মামলায় গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বরিশাল-১ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি এম জহিরউদ্দিন স্বপন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে তিনি তার বাড়ি গৌরনদীর শরিকল ইউনিয়নের আশপাশ এলাকায় কয়েক দিন কৌশলী প্রচারণা চালালেও গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় কিংবা তৃণমূল পর্যায়ে তার প্রচারণা নেই। এমনকি তার পক্ষে গতকাল পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি ওই আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নবঞ্চিত জেলা (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে। ওই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, সবাই তার সঙ্গে আছে। ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি দেশে এসেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ২৫ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামার কথা বলেছেন। আ ক ন কুদ্দুসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে তিনি মাঠে না নামতে পারলেও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ করছেন বলে জানান জহিরউদ্দিন স্বপন। বরিশাল-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি কৌশলী প্রচারনা চালালেও তার পাশে নেই দলের মনোনয়নবঞ্চিত আরেক নেতা সাবেক হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামাল। উপরন্তু বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর শহীদুল হক জামালের লোকজন আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। পরোক্ষভাবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ তাদের। বরিশাল-৩ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সহ-সভাপতি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি দলের অন্যান্য আসনের প্রার্থীদের চেয়ে প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে থাকলেও তার পাশে দেখা যাচ্ছে না ওই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির আরেক সহ-সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমানকে। বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুল আহসান হিমু জানান, বেগম সেলিমা রহমান দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কয়েক দিন পর নির্বাচনী এলাকায় আসবেন ধানের শীষের প্রচারণায়। বরিশাল-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের জে এম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর। ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সদরে প্রচারণায় গিয়ে ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। আহতাবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জাহাঙ্গীর। এর বাইরে থানা, ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো ধরনের প্রচারণা নেই ঐক্যফ্রন্টের। ওই আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক এমপি বিএনপি নেতা মেজবাউদ্দিন ফরহাদকেও দেখা যায়নি ধানের শীষের প্রচার-প্রচারণায়। বরিশাল-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকটে মজিবর রহমান সরোয়ার। এখানে মনোনয়নবঞ্চিত দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন এবং সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিলেও প্রচারণার মাঠে নেই মনোনয়নবঞ্চিত অপর নেতা জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন। তার মান ভাঙানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বরিশাল-৬ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন খান। তিনি কয়েক দিন ধরে বিরামহীন প্রচারণায় অংশ নিলেও তার সঙ্গে দেখা যায়নি ফ্রন্টের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ খানকে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর