সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

লকডাউন মানছেই না চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

লকডাউন মানছেই না চট্টগ্রাম

পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটিয়ে এবং মাইকিং করেও ঘরে রাখা যাচ্ছে না চট্টগ্রামের মানুষকে - বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিশ্বের বহু দেশ করোনা থেকে বাঁচার জন্য দেশব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ছোঁয়াচে এ রোগের আবির্ভাবের পর বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন বাংলাদেশও মহাবিপদের ঝুঁকিতে। সেই ঝুঁকিপূর্ণ সময় এখন চলছে। তাই ২৫ মার্চ থেকে সরকার দেশব্যাপী ছুটি ঘোষণা করে এবং সেই ছুটি আরও দুই দফা বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো লকডাউন করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অহেতুক রাস্তায় বের হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি শারীরিক শাস্তিও নিশ্চিত করেছে। এসব কাজ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। তারা প্রতিনিয়ত মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এত সবের পরও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোকজন মানছেনই না লকডাউন সতর্কতা। কভিড-১৯ সম্পর্কে একেবারে উদাসীন ও বেওয়াকিবহাল আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এদিকে দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করেও জনগণকে বোঝাতে পারছে না। দেশের স্থানীয় প্রশাসনের ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা শহর পর্যন্ত দায়িত্বশীলরা পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটিয়ে এবং মাইকিং করেও সাধারণ মানুষকে ঘরে ঢোকাতে পারছেন না। যে-ই বলুক, শোনার যেন কেউ নেই এমন অবস্থা। অকারণে শিশু-তরুণ-যুবক-প্রৌঢ় সবাই নানা অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। তারা রাস্তায় অহেতুক ঘোরাফেরা করছেন। দোকানের অংশ খোলা রেখে চা বিক্রি করছেন দোকানিরা। সেখানে গাদাগাদি করে গায়ে গা ঘেঁষে বসে চা খাচ্ছেন, গল্পগুজব করছেন অনেকে। গতকাল নগরীর বকশীরহাট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই যেন নেই এসব এলাকার মানুষজনের কাছে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই মানুষ হাঁটছে, বাজার-সদাই করছে, আড্ডা দিচ্ছে। পার্থক্য শুধু এই, অন্যান্য সময় কেউ মুখে মাস্ক ব্যবহার না করলেও এখন মাস্ক ব্যবহার করছে। বাকি সব কাজ স্বাভাবিক মনে করেই চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার এক বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া হলেও তিনি নগরীর ফকিরহাট এলকার মুদিদোকানি ছিলেন। তাকেই বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম করোনা আক্রান্ত মৃত্যু। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিসহ বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগের কারণেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। অথচ নগরীর উল্লিখিত স্থানগুলোতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয় অধিকাংশ মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘আমরা জনগণের উদ্দেশে বলি, ঘরে থাকুন। কোনো রকম প্রাণে বেঁচে থাকলে চাকরি, ব্যবসা, দিনমজুরের কাজ সব করে ভবিষ্যৎ পার করা যাবে। করোনায় প্রাণ গেলে দেশময় বিপর্যয় নেমে আসবে। আপনি বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান। বাঁচান দেশ ও জাতিকে। মানুষকে সচেতন করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করছি। সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বরতদের বিশ্রাম নেই, চোখে ঘুম নেই। অথচ দেশের মানুষ করোনার ভয়াবহতা বোঝার চেষ্টা করছে না।’

সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হস্তে সামাজিক ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের জন্য নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। নগরীর কোনো কোনো অংশে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

সর্বশেষ খবর