সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

এবার ‘ডিজিটাল’ নববর্ষ

ধারনকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করবে ছায়ানট চারুকলা করেছে ডিজিটাল পোস্টার

জিন্নাতুন নূর

এবার ‘ডিজিটাল’ নববর্ষ

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ও শঙ্কার কারণে প্রতিবারের মতো এবার বৃহৎ আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে না বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার ঘরে ঘরে ডিজিটাল মাধ্যম-এর সহায়তায় বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানানো হবে। মূলত উৎসবপ্রিয় জাতি ঘরের বাইরে গিয়ে যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে না পড়ে সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত। এর ধারাবাহিকতায় এবার পয়লা বৈশাখের সকালে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ধারণকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করবে আর মঙ্গল শোভাযাত্রার বদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ডিজিটাল পোস্টার বানিয়ে প্রদর্শন করবে। এর মাধ্যমে মানুষের মনোবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবেন চারুকলার শিল্পীরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার ঘরের বাইরে জোটবদ্ধ হয়ে নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বদলে তিনি ঘরে বসে নববর্ষের উৎসব পালন করতে বলেছেন। এ ছাড়া রেডিও, টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে নিজেদের পরিবার নিয়ে উৎসব পালন করার জন্য বলেছেন। মোটকথা প্রধানমন্ত্রী বাংলা নববর্ষকে এবার ডিজিটালি স্বাগত জানানোর আহ্বান করেছেন। পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বাতিল হলেও এবার ভিন্ন আঙ্গিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে ছায়ানট।

 গত ১১ এপ্রিল ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এবার জনসমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন না করার সিদ্ধান্তকে সময়োচিত বলে উল্লেখ করা হয়। এতে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘‘আপন সত্তার অহংকার, নববর্ষকে ডিজিটালি স্বাগত জানানোর আহ্বান তার প্রতিকূলতার কাছে নতিস্বীকার না করার অটল মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান মহামারীতে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের জীবনাবসান ও জীবন শঙ্কার ক্রান্তিলগ্নে ছায়ানট তাই ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’ এই অঙ্গীকার নিয়ে সীমিত আকারে নববর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।’’ ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, গত তিন বছর ছায়ানট যে অনুষ্ঠান করেছে তা বিটিভির কাছে ধারণ করা আছে। সেখান থেকে নির্বাচিত গান নিয়ে এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান সাজানো হবে। তবে বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতির সমাপনী কথন ধারণ করে তা সম্প্রচার করা হবে। অনুষ্ঠানটি শুরু হবে সকাল ৭টায়। এ ছাড়া ছায়ানটের কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্মেও নববর্ষের অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে।

পয়লা বৈশাখ উদযাপনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণিল আয়োজনটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এবার এই আয়োজনটিও হচ্ছে না। তবে ডিজিটালি মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি পোস্টার তৈরি করে তার মাধ্যমে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হবে। যাতে সব ভয়ের বিপরীতে মানুষের জয়গানের কথা উল্লেখ করবে চারুকলা অনুষদ। কালো রঙের পোস্টারটির একেবারে ওপরে লেখা বৈশাখ ১৪২৭। এর নিচে লেখা, ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না।’ এর নিচে নীলাভ রঙের বৃত্তের চারপাশে প্রস্ফুটিত ফুল অঙ্কিত। যার মাধ্যমে চারুকলা বার্তা দিচ্ছে আবারও পৃথিবী জেগে উঠবে ফুলের মতো করে। এর নিচেই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য, কবিগুরুর পঙ্ক্তি, ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।’ চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পোস্টার তৈরি করেছি। তবে এবার ছাপার বদলে পোস্টার বানানো হয়েছে ডিজিটাল ফরমেটে। প্রতিবার দেশ ও সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয় আমাদের পোস্টারে প্রতিফলিত হয়। এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণকালে মানুষের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য দেখেছি তা পোস্টারে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে অনেকের মধ্যে এক ধরনের কুসংস্কার কাজ করছে। তারা রোগটিকে অলৌকিক কিছু বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করা এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই এবারের পোস্টার তৈরি করেছে চারুকলা অনুষদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর