মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ইঁদুর বিড়াল খেলা

উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন, সহযোগিতা দেয় সেবা সংস্থা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ইঁদুর বিড়াল খেলা

গতকাল নগরীর আকবর শাহ থানার ফিরোজ শাহ সংলগ্ন ঝিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় পরিদর্শন করে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকার ৮৩৫টি পরিবারের মধ্যে ৭৬৩টিকে উচ্ছেদ করে। একই সঙ্গে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে উচ্ছেদকৃত পাহাড়ি জায়গা সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্ছেদকৃত স্থানে ফের স্থাপনা তৈরি করে সেখানে চলছে সেবাগুলোর কাজ। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বিভিন্ন প্রদানকারী সেবা সংস্থা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এখনো বিচ্ছিন্ন করা হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের অবৈধ সংযোগ। জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে বৈরী আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর আকবর শাহ্ থানার ফিরোজ শাহ সংলগ্ন ঝিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় পরিদর্শনে যান পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম জাকারিয়া, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম, বাকলিয়া সার্কেলের আশরাফুল হাসান ও আগ্রাবাদ সার্কেলের আবদুস সামাদ শিকদার। পরিদর্শনে আকবর শাহ ঝিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের বসতবাড়িতে দেখা গেছে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাস্তবায়ন করছে নানা প্রকল্প, চলছে জাইকার অর্থায়নে ওয়াসার সুপেয় পানির পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ। তাছাড়া মতিঝরনা-বাটালি হিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে পুনরায় দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ঘর, স্কুল, স্যানিটারি টয়লেট। এমনকি সেখানে জাইকার অর্থায়নে দেওয়া হচ্ছে ওয়াসার সুপেয় পানির সংযোগ। আকবর শাহ ঝিল এলাকায় পাওয়া গেছে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার। অথচ পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সংযোগ ও সেবা দেওয়া নিষেধ।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ১ হাজার ২৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় কেটে অবৈধভাবে দখল করে বাসা তৈরি করে। পরে তারা এসব পাহাড়ের বাসা দুই থেকে চার হাজার টাকায় ভাড়া দেয়। স্বল্প আয়ের মানুষেরা এসব বাসায় ভাড়া থাকেন। স্থানীয়দের প্রভাবের কারণে উচ্ছেদের পরও তারা আবারও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ফিরে আসে।

প্রসঙ্গত, গত বছর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।  ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করা উল্লেখযোগ্য পাহাড়ের মধ্যে আছে, বায়েজিদ-ফৌজদার হাট লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়ে ৪০০টি পরিবার, ফয়েজলেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৯টি পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ে ১০টি পরিবার, আকবরশাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮টি পরিবার, লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২২টি পরিবার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর