মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার মধ্যেও চিংড়ি রপ্তানিতে সুবাতাস

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চিংড়িশিল্প, ইউরোপের বাজারে রপ্তানি শুরু

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

রপ্তানিতে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়িশিল্প। সর্বশেষ জুন-জুলাইয়ে মোংলা বন্দর থেকে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে; যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুনে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। সেখানে চলতি বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন; যার বাজার মূল্য ১৯৬ কোটি টাকা। খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ অফিস এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিতে করোনার সবচেয়ে ভয়াবহতা ছিল মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে। ওই সময় চিংড়ি রপ্তানির ২৯০টি কনসাইনমেন্ট (চালান) বাতিল হয়। বিদেশি আমদানিকারকরা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কথা বলে শিপমেন্ট বাতিল করেন। তবে জুন-জুলাই থেকে রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হয়। মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ টি এম তৌফিক মাহমুদ জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি বেশি রপ্তানি হয়। এরপর করোনার কারণে রপ্তানিতে ভাটা পড়ে।

তবে শেষ পর্যন্ত বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৫০০ মেট্রিক টন রপ্তানি বেড়েছে। জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল ২৯ হাজার ৬ মেট্রিক টন। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২৯ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন; যার বাজার মূল্য ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

এদিকে রপ্তানিতে আশার আলো দেখলেও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. আবদুল বাকি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে উপকূলের অসংখ্য চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আবার নদ-নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ঘের ভেসে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত চিংড়ি মিলছে না।’

তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যেও জুন-জুলাইয়ে চিংড়ি রপ্তানি আশার আলো দেখাচ্ছে। চলতি আগস্টে রপ্তানির একই চিত্র থাকবে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে আবারও রপ্তানি নি¤œমুখী হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি লোকাল মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।’

জানা যায়, উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০ লাখ মানুষ।

মৎস্য অধিদফতর খুলনার সহকারী পরিচালক এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, ‘নানা কারণে চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। পরপর কয়েক বছর লোকসানের কারণে চিংড়ির বদলে অনেকে সাদা মাছ বা ধান চাষে ঝুঁকছেন। তবে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদে অল্প জায়গায় অধিক চিংড়ি উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর