রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পানির স্তর নিয়ে হুমকিতে কৃষি

দুই বছরেও প্রয়োগ হয়নি ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন

নজরুল মৃধা, রংপুর

বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই উত্তরাঞ্চলের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন করেছে। আইনটি পাস হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি। কিন্তু  দুই বছরেও আইনটি এ অঞ্চলে বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে লাখ লাখ সেচযন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।

জানা গেছে, বোরো মৌসুমেও উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় কয়েক লাখ সেচযন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে কৃষি খাত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আবাদি জমি সেচ সংকটে পড়ছে। কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ভূ-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আগাম নেমে যেতে শুরু করে। ১০ বছর আগে  জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে থাকলেও এখন অনেক স্থানে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচেও পাওয়া যায় না। পানির প্রবাহ যখন স্বাভাবিক থাকে তখন এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২ ফুট নিচে পাওয়া যায়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র মতে, এ অঞ্চলে সেচ মৌসুমে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এর বেশির ভাগই অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে। দুই বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন পাস হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়নি। 

এ ছাড়া তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ অঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে ঠিকমতো পানি উঠাতে পারে না ক্রমাগত পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে। ফলে বোরোসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ নিয়ে দুঃশ্চিতায় থাকেন কৃষকরা।

রংপুরের বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে নেমে যায়। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায়  ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচেও পানি পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ ভূগর্ভ থেকে অপরিকল্পিত পানি উত্তোলন।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির (ঢাকা) অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, অপরিকল্পিতভাবে সেচযন্ত্র স্থাপনে কৃষকদের মধ্যে সচেনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে মাঠপর্যায়ে জরিমানা বা অন্য কোনো শাস্তির বিষয়টি করোনার কারণে এখনো শুরু হয়নি। তিনি বলেন, নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বোরো  চাষ কমিয়ে কৃষকদের আউশ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর