শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

‘আমার ফাঁসি হোক, সাব্বিরের বিচার আল্লাহ করবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে নিজের ১৭ মাস বয়সী শিশুকন্যাকে বালিশচাপায় হত্যার পর থানায় পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন মা নাজমিন আক্তার (২৮)। পুলিশের কাছে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ সময় তিনি নিজেকে মানসিক রোগী হিসেবেও দাবি করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানায় নাজমিনের স্বামী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বলদী গ্রামের কাতার ফেরত সাব্বির আহমদ মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল পুলিশ নাজমিনকে আদালতে হাজির করলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। নাজমিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের জিয়া উদ্দীনের মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি সিলেট মহানগরীর মেজরটিলা নিপোবন আবাসিক এলাকার ৪৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।

পুলিশের কাছে নিজের শিশুকন্যাকে হত্যার দায় স্বীকার করে নাজমিন আক্তার বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাবো না। সাব্বিরকেও (তার স্বামী) ফাঁসাবো না। তাকে ফাঁসালেও সে অল্প শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি। আমার ফাঁসি হোক।’

পুলিশের কাছে ক্ষুব্ধ সুরে নাজমিন আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। চার বছর সেখানে থাকা অবস্থায় সে আমার ভরণপোষণ দেয়নি। আমি স্কুলে শিক্ষকতা করে এবং টিউশনি করে চলেছি। পরে দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করে। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী রেখেই সে আবার কাতার চলে যায়।’

নাজমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ তুলে আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্টের কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার পরিবার তা না করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে। আল্লাহর কী রহমত! জন্মের পর দেখা গেল মেয়ের চেহারা অবিকল সাব্বিরের মতো। চোখ, ঠোট, মাথার চুল, হাসি সব একই রকম।’ এরপর তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছে। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেনি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। এই দুঃখে আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি।’ কিন্তু শিশুটি তো নিষ্পাপ, তাকে খুন করলেন কেন- পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমিন বলেন, ‘আমার তো সব শেষ। আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে সাব্বির। আমাকে জিন্দা লাশ করে ফেলছে সে। তাই আমার মাথা কাজ করেনি। তার প্রতি ক্ষোভে-কষ্টে মেয়েকে বালিশচাপা দেই। আমি ইমোশন থেকে আমার বাচ্চাটাকে মেরেছি।’

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহ থেকেই এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুটির মা নাজমিন মেয়েকে হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।’

সর্বশেষ খবর