বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে কর্ণফুলী

কমছে পানির উৎস, পলি জমে ভরাট হচ্ছে তলদেশ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

অস্তিত্ব সংকটে কর্ণফুলী

অস্তিত্ব সংকটে কর্ণফুলীর মোহনা। বিলীন হয়ে যাচ্ছে পানির উৎস। হ্রাস পাচ্ছে গভীরতাও। পলি জমে ভরাট হচ্ছে তলদেশ। অবৈধ স্থাপনায় সংকুচিত হচ্ছে নদীর পাড়। কমছে কর্ণফুলীর পানির উৎস। ছবিটি রাঙামাটির বরকল উপজেলার ঠেগামোড় এলাকা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অস্তিত্ব সংকটে কর্ণফুলীর মোহনা। বিলীন হয়ে যাচ্ছে পানির উৎস। হ্রাস পাচ্ছে গভীরতাও। পলি জমে ভরাট হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশ। অবৈধ স্থাপনায় সংকুচিত হচ্ছে নদীর পাড়। হুমকিতে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, নৌ যোগাযোগ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কৃষি ও জীববৈচিত্র্য। সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ করেছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরইআরসি)।

আরইআরসির তথ্যমতে, কর্ণফুলী নদীর প্রধান মোহনা ভারতের মিজোরাম প্রদেশের মমিত জেলার শৈতা গ্রাম অর্থাৎ লুসাই পাহাড়। যা রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ঠেগামুখ এলাকা থেকে হরিণার মুখের ছয় কিলোমিটার কর্ণফুলী ভারত-বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছয় কিলোমিটার নদীর ডান পাশে ভারত এবং বাম পাশে বাংলাদেশ। এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৬১ কিলোমিটার। প্রস্থ ৪৫৩ মিটার। ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পর এ নদীর একাংশ এখন রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ হিসেবে পরিচিত। বাঁধ দিলেও কর্ণফুলীর মোহনা ছিল সচল। রাঙামাটি বরকল আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুবিমল দেওয়ান বলেন, কর্ণফুলী নদী ঘিরে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। এর একাংশে কাপ্তাই হ্রদ। অন্য অংশে চট্টগ্রামের বন্দর। দীর্ঘ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পানির উৎস হ্রাস পাচ্ছে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরইআরসি) চেয়ারম্যান ও প্রধান গবেষক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, চট্টগ্রামের তুলনায় রাঙামাটিতে কর্ণফুলীর একাংশের পানি এখনো অনেক স্বচ্ছ। তবে মোহনা সংকটে। লুসাই পাহাড় কর্ণফুলী নদীর পানির উৎস। যা কর্ণফুলীর একাংশ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে এসে মিশেছে। কিন্তু এ হ্রদ সৃষ্টি হওয়ার পর একবারও ড্রেজিং করা হয়নি। যার কারণে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। একটা সময় শুধু রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় ছোট-বড় ১০০টি ঝরনার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু এখন সেগুলো শুধু ইতিহাস। অপরিকল্পিত বন উজাড়ের কারণে ঝরনাগুলো মরে গেছে। নদীতে পানির উৎসও হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া রাঙমাটির কাপ্তাই হ্রদজুড়ে অসংখ্য ডুবো চর রয়েছে। সেগুলোও অতিদ্রুত খনন প্রয়োজন। এভাবে চর ভেসে উঠলে একটা সময় বন্ধ হয়ে যাবে নৌ যোগাযোগব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে এ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কর্ণফুলীর উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে মোহনা পর্যন্ত তুলনামূলক চিত্র নিয়ে হয়নি বিস্তর কোনো জরিপ। তাই চলতি বছরের জুন থেকে নদীবিষয়ক গবেষণা সংস্থা আরডিআরসি এবং প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ডিসকভার যৌথভাবে জরিপ শুরু করেছে। গবেষণার প্রধান সমন্বয়কারী, বেঙ্গল ডিসকভারের সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, জীব-বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ কর্ণফুলী নদীঘেরা রাঙামাটি। দিন দিন এ নদী ও দুই পাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন বেহাল দশা। এর জন্য দায়ী কারা তার সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা হয়নি। দখল-দূষণের সঠিক তথ্য থাকলে নদী রক্ষা করা সম্ভব। তিনি বলেন, দখল-দূষণের কারণে নদীর জীববৈচিত্র্যের ওপর যে প্রভাব পড়তে পারে তা এ জরিপের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেঙ্গল ডিসকভার যেহেতু প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে তাই পরিবেশ রক্ষায়, কর্ণফুলী রক্ষায় আমরা সব ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাব। কর্ণফুলী বাঁচাতে হবে নতুবা চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি হারিয়ে যাবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, যে কর্ণফুলীকে ঘিরে চলে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা, সেই নদীর মোহনার অস্তিত্ব ধরে রাখা এখন সময়ের দাবি ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর