গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেছেন, আবাসন খাতের উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব বসতি দিবস-২০২২’ এর সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. শাজাহান আলী, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমান প্রমুখ। পরে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ব বসতি দিবস ২০২২ উপলক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতি বছর আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে আরও বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার মতো ঘটনা বিশ্বে নতুন করে উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফলে আবাসন ব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ আবির্ভূত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য চাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
শরীফ আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগাতি উপজেলায় আশ্রয়হীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন শুরু করেন। রাজধানী ঢাকার বাউনিয়াবাদে তিনি বাস্তুহারাদের বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নিহত হওয়ার পর এই কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সরকার স্বল্প, মাধ্যম ও নিম্ন? আয়ের মানুষের জন্য বিপুল সংখ্যক প্লট উন্নয়ন ও ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। রাজধানীর বস্তিবাসীদের জন্য ৫৩৩টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গীর দত্তপাড়া এবং ঢাকার মিরপুরে এ ধরনের আরও বড় দুটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কে পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে ১৩ হাজার ৭২০টি ফ্ল্যাট। সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন ২০০৮ সালে বিদ্যমান ৮ শতাংশ থেকে এ পর্যন্ত ২৬ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমি রক্ষা পাবে অন্যদিকে সবার মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।