রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) জমে উঠেছে খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাপা ফুডপ্রো এক্সপো’। প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন গতকাল বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণে মুখর। তারা শুধু মেলা ঘুরেই দেখছিলেন না, ব্যাগ ভরে নিয়ে যাচ্ছিলেন মিষ্টি, চিপস, ঘি, মাখন, সস, চকলেট, নুডলসসহ নানা খাদ্যপণ্য। ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে বিভিন্ন স্টলের কর্মীদের। দর্শনার্থী সমাগমে সন্তোষ প্রকাশ করেছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আইসিসিবির তিনটি হলজুড়ে আয়োজিত মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, চীন, ইতালি, তুরস্ক, স্লোভেনিয়াসহ ১৭টি দেশের খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ৪ শতাধিক স্টলে তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। এক ছাদের নিচেই মিলছে দেশি-বিদেশি প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিপুল সমাহার।
সেই সঙ্গে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য রয়েছে ফুড কালার, ফুড ইনগ্রিডিয়েন্ট ও আধুনিক প্রযুক্তির ফুড মেশিনারিজ। আয়োজকরা জানান, খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করতে মেশিন, কাঁচামাল, প্যাকেজিং, ফ্লেভারসহ যা যা প্রয়োজন হয় তার সবকিছু এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে আয়োজন করা হয়েছে বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর অষ্টম আসর। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা জানান, প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থী সমাগম বেড়েছে। তারা ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছেন। বিভিন্ন প্রকারের গুঁড়া মসলা, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, নুডলস, ম্যাকারনি, সস, চিপস, চকলেট, জেলি, বিভিন্ন ফ্লেভারের ড্রিংকস, জুস, পিঠা, ফ্রোজেন শিঙাড়া-সমুচা-রোল, ঘি, মাখন, কেক, ক্রিমরোল এসব বেশি কিনছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় কথা হয় উত্তরা থেকে আসা নাসরিন জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে পূর্বাচলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। মেলা চলছে দেখে ঢুকে পড়লাম। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুরছি। অনেক কিছু কিনেছি। কত ধরনের খাবার যে আছে, তা এসব মেলায় না এলে বোঝা যায় না!মেলায় অংশ নেওয়া ফাইভ আর ট্রিমস ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রাজু আহমেদ রানা বলেন, আমরা ইনকিউবেটর, পোলট্রি কেজ, পোলট্রি অটো ফিড সেটাপ, মালসিং পেপারসহ খাদ্যপণ্য তৈরির বিভিন্ন মেশিন উৎপাদন করি। নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এগুলোর চাহিদা অনেক। অনেকেই আসছেন, পরবর্তীতে কিনবেন বলে ভিজিটিং কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন।
বঙ্গ ফ্লেভার অ্যান্ড ফ্রাগরেন্স (বিএফএফ) লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মঞ্জুর কাদের বলেন, আমরা মূলত ফুড কালার ও খাবারের টেস্ট বৃদ্ধির জন্য ফ্লেভার বিক্রি করি। ফুড প্রসেসিং, প্যাকেট প্রসেসিং, ফ্লেভার, ফুড কালার, ইনগ্রিডিয়েন্টস এগুলোর বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা আছে। বিএফএফ তাদের নিজস্ব ল্যাবে ফুড কালার, ফ্লেভার উৎপাদন করে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলোর কাছে বিক্রি করে। ফুড গ্রেডেড এসব কালার ও ফ্লেভারে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার হয় না। এতে স্বাস্থ্যের উপকারও হবে না, অপকারও হবে না। তবে খাবারের স্বাদ বাড়বে। আমরা দর্শনার্থীদের সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।
ইনটেক্স প্যাকেজিং কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা ২০০৩ সাল থেকে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে ফুড প্রসেসিং ও প্যাকেজিং মেশিনারিজ সরবরাহ করছি। মেলাতে এসে অনেক প্রতিষ্ঠান ও নতুন উদ্যোক্তা আমাদের মেশিনারি দেখে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এরিজ ম্যাগনেটিকস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভারতীয় কোম্পানির কর্মকর্তা দ্বীপ কুমার বলেন, আমরা এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত। এতে বাংলাদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের প্রচার এবং প্রসার হবে বলে বিশ্বাস করি।