রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ৯৩ প্রার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। গতকাল রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি হল রুমে রসিক নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। এতে তারা মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং সাধারণ কাউন্সিলরদের তথ্য তুলে ধরেছেন। এতে উল্লেখ করা হয় প্রার্থীদের সম্পদের যে চিত্র উঠে এসেছে তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত হিসাব বলা যায় না। হলফনামায় অধিকাংশ প্রার্থীই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেননি। বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। সুজনের দেওয়া তথ্যমতে, ৯ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, তিনজনের স্নাতক, একজনের এইচএসসি এবং একজন অষ্টম শ্রেণি পাস। ৩৩ ওয়ার্ডে ১৮০ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৮ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৩৬ জনের এসএসসি, ২৭ জন এইচএসসি পাস। স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পাস রয়েছেন আটজন। চারজন শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি। ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬৭ প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন রয়েছেন ২৮ জন। ১৭ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, ৮ জন এইচএসসি পাস। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী ৮ জন। ২৫৪ প্রার্থীর অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১৪৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। যার মধ্যে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারেননি এমন প্রার্থী ৯৩ জন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী ৭০ জন। ৯ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী দুজন, একজনের পেশা শিক্ষকতা ও একজন আইনজীবী। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পেশা দেখিয়েছেন মেয়র। সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের মধ্যে ৪২ জন গৃহিণী, ১৩ জনের পেশা ব্যবসা, ছয়জন পেশার ঘর পূরণ করেননি। কাউন্সিল প্রার্থীর মধ্যে ১২৯ জনের পেশা ব্যবসা। কৃষিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন ২০ জন, ১৭ জন চাকরিজীবী। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অতীতে তিন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তারা হলেন, জাতীয় পাটির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান বণি ও লতিফুর রহমান মিলন। কাউন্সিল প্রার্থীদের মধ্যে ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অতীতে মামলা ছিল ৩০ জনের। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা রয়েছে। তারা হলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাফিজার রহমান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম রবিন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের এমরাউল হাসান সুজন এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সামছুল হক। সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তিনটি পদে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ৯ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নিজের এবং নির্ভরশীল আয় চারজনের ৫ লাখ টাকার কম। চারজনের আয় বছরে ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। একজনের আয় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। বছরে সর্বোচ্চ আয় জাসদের শফিয়ার রহমান ৬২ লাখ ৩৫ হাজার। দ্বিতীয় আয় জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার, তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় লতিফুর রহমান মিলনের। মোস্তাফিজার রহমান তার নিজের আয় দেখাননি। পুরো আয় দেখিয়েছেন নির্ভরশীলতার ঘরে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১৩৫ জনের আয় ৫ লাখ টাকার কম। ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় দেখিয়েছেন ৩০ জন। দুজন আয় দেখিয়েছেন ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের অধিকাংশের আয় ৫ লাখ টাকার কম। মেয়র পদে ৯ জনের ব্যাংকে কারও দায়-দেনা নেই। মোস্তফা ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেখালেও তা পরিশোধের কথা বলেছেন।
সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনের দুজনের ব্যাংকে দায়-দেনা রয়েছে। মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোস্তফা, সাধারণ কাউন্সিলর ৫৩ জন এবং ৯ জন সংরক্ষিত প্রার্থী বিগত ২০১৭ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। এ সময় মহানগর সুজনের সভাপতি খন্দকার ফখরুল আমান বেনজু উপস্থিত ছিলেন।