চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পরিবেশ অধিদফতর যৌথভাবে মহানগরের দুটি এলাকাকে ‘নো হর্ন জোন’ ঘোষণা করে। কিন্তু বছর পার হতেই এ দুটি নির্দেশনা এখন অস্তিত্বহীন। কোনোটিতেই মানা হয় না এ নির্দেশনা। উল্টো উধাও হয়ে গেছে নির্দেশনার সাইনবোর্ড। এ নিয়ে তদারকি সংস্থা দুটির কার্যকর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে নো হর্ন জোন ঘোষণা করেও এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। সাধারণত দিনের বেলায় এসব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এসব এলাকায় শব্দের মাত্রা থাকে ৭৫ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত।
জানা যায়, মুজিববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে পরিবেশ অধিদফতর শব্দদূষণ-মুক্ত দেশ গড়তে বিধিমালা অনুযায়ী ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিমূলক প্রকল্পে’র আওতায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক এলাকা/স্থানকে নীরব এলাকা ঘোষণার মাধ্যমে শব্দদূষণ রোধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৮ ও ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এলাকাকে ‘নো হর্ন জোন’ ঘোষণা করে। এখন এসব নির্দেশনার কোনো চিহ্নও নেই। পরিবেশ অধিদফতর, চট্টগ্রাম মহানগরের সহকারী পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘নগরে দুটি নো হর্ন জোন ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এগুলো শতভাগ বাস্তবায়নে চালক-যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। অন্যথায় নো হর্ন জোন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’সরেজমিন দেখা যায়, নগরের জামাল খান মোড়েই আছে অন্তত ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। অথচ প্রতিনিয়তই এ সড়ক দিয়ে যানবাহনগুলো সর্বোচ্চ আওয়াজে হর্ন বাজিয়ে চলাচল করে। অভিন্ন অবস্থা চমেক হাসপাতালের সামনের সড়কগুলোয়। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা গাড়ির হর্নে বোঝাই যাবে না যে এখানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। কেবল এ দুটি এলাকা নয়, নগরের সর্বত্রই চলছে উচ্চমাত্রার ভয়াবহ শব্দদূষণ। বর্তমানে যানবাহনের উচ্চমাত্রার হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন, অ্যাম্বুলেন্সের বিকট হর্ন, নির্মাণ উপকরণ ও কাজের হর্ন, ইট ভাঙার মেশিনের শব্দ, সামাজিকসহ নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষে উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার চলছে।
জানা যায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং তার চারদিকের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা ‘নো হর্ন জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। এসব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনের কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, নগর কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ এলাকার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র, শিল্প বা নীরব এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে স্ট্যান্ডার্ড সংকেত বা সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করতে হবে মর্মে বিধি রয়েছে। তবে নীরব এলাকায় হর্ন বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কাগজে কলমে।