শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে থমকে আছে আবাসন ব্যবসা

বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রবাসীরা, মন্দাভাব কাটাতে মেলার উদ্যোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে থমকে আছে আবাসন ব্যবসা

সিলেটে আবাসন ব্যবসায় বিরাজ করছে স্থবিরতা। ক্রেতা সংকটে ভুগছে আবাসন কোম্পানিগুলো। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভাব ও দেশে নির্মাণসামগ্রীর অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আবাসন ব্যবসায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আবাসনশিল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলেছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পুঁজি আটকে থাকায় নতুন করে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। ব্যবসায় মন্দাভাব কাটাতে এবার তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেটের আবাসন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটের আবাসন কোম্পানিগুলোর প্লট ও ফ্ল্যাটের বেশির ভাগ ক্রেতা প্রবাসী। কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। প্রবাসে আয় কমে যাওয়া ও জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ায় দেশে বাসাবাড়ি নির্মাণে প্রবাসীদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিলেটে নতুন করে আবাসন প্রকল্পও গড়ে উঠছে না। সিলেটে আবাসন খাতের একমাত্র সংগঠন সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপ (সারেগ) সূত্র জানান, সিলেটে অর্ধশতাধিক আবাসিক কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে সারেগের সদস্য ২০টি। এসব প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, যার অন্তত ৭০ ভাগ বিনিয়োগ প্রবাসীদের। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম অত্যধিক বেড়েছে। মাটি ভরাটসহ আনুষঙ্গিক খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে বেড়েছে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম। এতে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। সারেগসূত্র জানান, আগে সিলেটে ফ্ল্যাটের মূল্য ছিল প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। নির্মাণসমাগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন কোম্পানিগুলোকে বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বর্গফুট। একইভাবে আগে যেখানে প্লট ভরাটে প্রতি বর্গফুট মাটি সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকায় কেনা যেত, এখন কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৫ টাকায়। এ কারণে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ।

এদিকে সিলেটে আবাসন খাতের ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীর বেশির ভাগই প্রবাসী। ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে আসায় বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রবাসীরা। প্রায় তিন বছর ধরে এ স্থবিরতা চলায় পুঁজি ফেরত নিয়েও তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে কোনো প্রকল্পে প্রবাসীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে সিলেটে নতুন করে কোনো আবাসন প্রকল্পও গড়ে উঠছে না। কিন্তু আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, কভিডের আগ পর্যন্ত সিলেটে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েই চলছিল। একসময় ক্রেতার সিংহভাগই ছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। এখন ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীও দেশে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন।

এ অবস্থায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবং ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে অবগত করতে সিলেটে তিন দিনের আবাসন মেলার আয়োজন করেছে সারেগ। ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা স্টেডিয়ামের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে আয়োজিত এ মেলায় আবাসন, নির্মাণসামগ্রী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে অন্তত ৫০টি কোম্পানি অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন সারেগের সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন। তিনি জানান, মেলার মাধ্যমে ক্রেতাদের যেমন বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যাবে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের মন থেকে ভীতি দূর করার চেষ্টা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর